লাভ-ক্ষতি
একজন ব্যবসায়ী দোকান ভাড়া, পরিবহন খরচ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ পণ্যের ক্রয়মূল্যের সাথে যোগ করে প্রকৃত খরচ নির্ধারণ করেন। এই প্রকৃত খরচকে বিনিয়োগ বলে। এই বিনিয়োগকেই লাভ বা ক্ষতি নির্ণয়ের জন্য ক্রয়মূল্য হিসেবে ধরা হয়। আর যে মূল্যে ঐ পণ্য বিক্রয় করা হয় তা বিক্রয়মূল্য। ক্রয়মূল্যের চেয়ে বিক্রয়মূল্য বেশি হলে লাভ বা মুনাফা হয়। আর ক্রয়মূল্যের চেয়ে বিক্রয়মূল্য কম হলে লোকসান বা ক্ষতি হয়। আবার ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্য সমান হলে লাভ বা ক্ষতি কোনোটিই হয় না। লাভ বা ক্ষতি ক্রয়মূল্যের ওপর হিসাব করা হয়।
আমরা লিখতে পারি, লাভ = বিক্রয়মূল্য – ক্রয়মূল্য
ক্ষতি = ক্রয়মূল্য – বিক্রয়মূল্য
উপরের সম্পর্ক থেকে ক্রয়মূল্য বা বিক্রয়মূল্য নির্ণয় করা যায়।
তুলনার জন্য লাভ বা ক্ষতিকে শতকরা হিসেবেও প্রকাশ করা হয়।
উদাহরণ ১। একজন দোকানদার প্রতি হালি ডিম ২৫ টাকা দরে ক্রয় করে প্রতি ২ হালি ৫৬ টাকা দরে বিক্রয় করলে তাঁর শতকরা কত লাভ হবে?
সমাধান : ১ হালি ডিমের ক্রয়মূল্য ২৫টাকা
যেহেতু ডিমের ক্রয়মূল্য থেকে বিক্রয়মূল্য বেশি, সুতরাং লাভ হবে।
এখানে, লাভ = (৫৬ – ৫০) টাকা বা ৬ টাকা।
৫০ টাকায় লাভ ৬ টাকা
∴ ১ ” ” ৬৫০টাকা
= ১২ টাকা।
∴লাভ ১২%
উদাহরণ ২। একটি ছাগল ৮% ক্ষতিতে বিক্রয় করা হলো। ছাগলটি আরও ৮০০ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রয় করলে ৮% লাভ হতো। ছাগলটির ক্রয়মূল্য নির্ণয় কর।
সমাধান : ছাগলটির ক্রয়মূল্য ১০০ টাকা হলে, ৮% ক্ষতিতে বিক্রয়মূল্য (১০০ – ৮) টাকা বা ৯২ টাকা।
আবার, ৮% লাভে বিক্রয়মূল্য (১০০ + ৮) টাকা বা ১০৮ টাকা।
∴বিক্রয়মূল্য বেশি হয় (১০৮ – ৯২) টাকা বা ১৬ টাকা।
বিক্রয়মূল্য ১৬ টাকা বেশি হলে ক্রয়মূল্য ১০০ টাকা
” ১ ” ” ” ” ১০০১৬ “
= ৫০০০ টাকা
∴ছাগলটির ক্রয়মূল্য ৫০০০ টাকা।
এক ব্যক্তি 20% লাভে একটি দ্রব্য বিক্রয় করে। কিন্তু যদি সে 20% কম দামে কিনে 5টাকা কম দামে বিক্রি করতো তাহলে ওর 25% লাভ হোতো। দ্রব্যটির ক্রয়মূল্য কত?
উ: এই অঙ্কটাতে সব তথ্য শতকরা হারে বলা আছে। কেবল একটি তথ্য নির্দিষ্ট মানে (5টাকা)
দেওয়া আছে। তাই অঙ্কটি 100 ধরে সমাধান করা যাবে। আবার ক্রয়মূল্য x ধরেও করা যাবে।
আমরা যে পদ্ধতিতেই সমাধান করি না কেন, অঙ্কটা যেমন যেমন বলছে আমাদেরও তেমন তেমন এগিয়ে যেতে হবে।
প্রথমে ক্রয়মূল্য 100 ধরা যাক। তাহলে বিক্রয়মূল্য হবে 100+20= 120টাকা। এবার বলা আছে 20% কম দামে কেনার কথা। আমরা 100 ধরেই অঙ্কটা করছি। তাই আলাদা করে 20% নির্নয় করতে হবে না।
অতএব দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্য হচ্ছে 100-20 =80টাকা এবং তখন বিক্রয়মূল্য হবে 80×125% = 100টাকা।
এবার অঙ্কটা বলছে দুটো বিক্রয়মূল্যের পার্থক্য হচ্ছে—- 5টাকা। তাই আমাদেরও দুটো বিক্রয়মূল্যের পার্থক্য নির্ণয় করতে হবে। দেখতে পাচ্ছি পার্থক্য হচ্ছে– 120 – 100 = 20 টাকা।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে- আমাদের 20 টাকা কীভাবে বের হোলো? না আমরা প্রথমে ক্রয়মূল্য 100 টাকা মনে করেছিলাম।
তাহলে 20টা পার্থক্য হয় ক্রয়মূল্য 100টা হোলে
5 টা পার্থক্য হয় – 100 ×5
————- = 25 টাকা।
20
অতএব দ্রব্য টির ক্রয়মূল্য 25 টাকা।
এবার অন্যভাবে সমাধান করা যাক্।
মনে করি দ্রব্য টির ক্রয়মূল্য- X টাকা
তাহলে বিক্রয়মূল্য হবে X x 120% = 6X/5টা
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্য হচ্ছে X এর 80% ( 20% কম) = X x 80% 4X
= —– টা
5
এবার 25% লাভে বিক্রয়মূল্য = 4X/5 x 125%
= X টাকা।
তাহলে দুটি বিক্রয়মূল্যেরপার্থক্য =
6X/5 – X = X/5
প্রশ্নানুসারে X/5 = 5 অর্থাৎ 25 টাকা।
অতএব দ্রব্য টির ক্রয়মূল্য হচ্ছে 25 টাকা।
2) এক ব্যবসায়ী 12.5% ক্ষতিতে একটি দ্রব্য বিক্রয় করে । যদি সে 103.60টাকা বেশি মূল্যে
বিক্রি করতে পারত তাহলে ওর 6% লাভ হোতো। দ্রব্যটির ক্রয়মূল্য কত?
উ : প্রথম বিক্রয়মূল্য 100 – 12.5 = 87.5টাকা
দ্বিতীয় বিক্রয়মূল্য 100 + 6 = 106 টাকা
পার্থক্য 106 – 87.5= 18.5 টাকা।
18.5 টাকা পার্থক্য যখন ক্রয়মূল্য 100 টাকা
103.60 টাকা পার্থক্য যখন ক্রয়মূল্য
100/18.5 × 103.60 = 560 টাকা।
নিজেরা করো:
1) এক ব্যবসায়ী 10% ক্ষতিতে একটি দ্রব্য বিক্রয় করে। যদি সে 20%কম দামে কিনতে পারত এবং
55 টাকা বেশি দামে বিক্রি করতো তাহলে ওর 40% লাভ হোতো। দ্রব্যটির ক্রয়মূল্য কত?
উ: 250 টাকা
2) এক ব্যক্তি 10% লাভে একটি দ্রব্য বিক্রয় করে। যদি সে 80 টাকা কম দামে বিক্রি করতো তাহলে ওর 10%ক্ষতি হতো। দ্রব্যটির ক্রয়মূল্য কত?
উ: 400টাকা।