জীবনবিজ্ঞান

কোষ ও কলা

কোষ

১। বিজ্ঞানী রবার্ট হুক ১৬৬৫ সালে কোষ আবিষ্কার করেন।

২। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় ৬ থেকে ১০ লক্ষ কোটি কোষ থাকে।

৩। নিউক্লিয়াসের গঠন অনুযায়ী কোষ ২ প্রকার-

  • প্রাককেন্দ্রিক কোষ ও
  • সুকেন্দ্রিক কোষ।

৪। অবস্থান ও কাজের ভিত্তিতে কোষ ২ প্রকার –

  • দেহ কোষ ও
  • জনন কোষ।

উদ্ভিদকোষ ও প্রাণিকোষের পার্থক্য-

কোষের অঙ্গাণু সমূহ

প্রোটোপ্লাজম – কোষমধ্যস্থ অর্ধস্বচ্ছ, দানাদার, থকথকে কলয়েড জাতীয় সজীব পদার্থ যার ৭৫-৯৫% পানি।

কোষপ্রাচীর – প্রাণিদেহে কোষ প্রাচীর থাকে না। উদ্ভিদ দেহে কোষ প্রাচীর মৃত ও জড় বস্তু দিয়ে গঠিত।

  • ব্যাকটেরিয়াতে মাইটোকন্ড্রিয়া অনুপস্থিত।
  • জীবের শ্বসন কার্যে সহায়তা করা মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ।

ক্লোরোপ্লাস্ট – সবুজ বর্ণের, ক্লোরোফিল এ এবং বি – এ দুই ধরনের ক্লোরোফিল দেখতে পাওয়া যায় ।

  • ক্রোমোপ্লাস্ট – রঙিন প্লাস্টিড, ক্যারোটিন (লাল) এবং জ্যান্থোফিল (হলুদ)
  • লিউকোপ্লাস্ট – বর্ণহীন। আলোর সংস্পর্শে এলে লিউকোপ্লাস্ট ক্রোমোপ্লাস্টে অথবা ক্লোরোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়।
  • ছত্রাক, নীলাভ সবুজ শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া এবং প্রাণী কোষে প্লাস্টিড নেই।

নিউক্লিয়াসকে কোষের মস্তিষ্ক, কোষের প্রাণ বা প্রাণকেন্দ্র বলা হয়।

একাধিক নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট কোষের গঠনকে সিনোসাইট বলা হয়, যেমন- Vaucheria, Botrydium, Sphaeroplea ইত্যাদি শৈবাল ও Penicillium সহ কতিপয় ছত্রাক।

কোষ বিভাজন ও তার প্রকারভেদ

কোষ বিভাজন ৩ প্রকার।

  • অ্যামাইটোসিস- যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম কোনো জটিল মাধ্যমিক পর্যায় ছাড়াই সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য (শিশু) কোষের সৃষ্টি করে, তাকে অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে।
  • মাইটোসিস- যে বিভাজনে প্রকৃত কোষের নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোজোম উভয়ই একবার করে বিভক্ত হয়, তাকে মাইটোসিস বলে। মাইটোসিস কোষ বিভাজনকে সমীকরণিক বিভাজন বলা হয় কারণ এতে অপত্য কোষ হুবহু মাতৃ কোষের অনুরূপ হয়ে থাকে।
  • মিয়োসিস- যে বিভাজনে নিউক্লিয়াস পরপর দুইবার ও ক্রোমোজোম একবার করে বিভক্ত হয়ে মাতৃকোষের ক্রোমোজোমের অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজোমযুক্ত চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয়, তাকে মিয়োসিস বলে। উন্নত জীবের জনন মাতৃকোষে মিয়োসিস হয়ে থাকে।

মাইটোসিস কোষ বিভাজন দুই অংশে বিভক্ত – ক্যারিওকাইনেসিস বা নিউক্লিয়াসের বিভাজন (ক্যারিওকাইনেসিস আবার ৫ ধাপে বিভক্ত) ও সাইটোকাইনেসিস বা সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ।

  • একটি কোষ সৃষ্টি, এর বৃদ্ধি ও পরবর্তীতে এর বিভাজন- এ তিনটি কাজ যে চক্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, তাকে বলা হয় কোষ চক্র
  • হাওয়ার্ড ও পেল্ক কোষ চক্র আবিষ্কার করেন।
  • একটি কোষ পরপর দু’বার বিভাজিত হওয়ার মধ্যবর্তী অবিভাজন অবস্থানকে বলা হয় ইন্টারফেজ
  • ইন্টারফেজ অবস্থায় কোষের নিউক্লিয়াসকে বলা হয় বিপাকীয় নিউক্লিয়াস
  • দেহকোষে অথবা হ্যাপ্লয়েড কোষে মিয়োসিস হয় না।

কলা কী, উদ্ভিদকোষে কলার শ্রেণিবিভাগ

কলা

কলা (Tissue) হলো উৎপত্তিগতভাবে এক, একই প্রকার অথবা একাধিক ধরনের কিছু কোষসমষ্টি যারা একই স্থানে অবস্থান করে, একটি সাধারণ কাজে নিয়োজিত থাকে।

  • যে টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে সক্ষম অর্থাৎ যে টিস্যুর নতুন কোষ উৎপন্ন করার ক্ষমতা থাকে, তাকে ভাজক টিস্যু বলে।
  • যে টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে অক্ষম এবং আকার, আকৃতি ও বিকাশে স্থায়িত্ব লাভ করেছে তাকে স্থায়ী টিস্যু বলা হয়।
  • যে স্থায়ী টিস্যু একই প্রকার কোষ দ্বারা গঠিত, একই উৎসস্থল থেকে উৎপন্ন হয় এবং একই ধরনের কাজ করে, তাকে সরল টিস্যু বলা হয়।
  • ট্রাকিডের কোষ প্রাচীর স্থূল, শক্ত ও লিগনিনযুক্ত।
  • ট্রাকিয়া বা ভেসেল অ্যানজিওস্পার্ম উদ্ভিদের জাইলেম টিস্যুর প্রধান উপাদান।
  • পাটের আঁশ বাস্ট ফাইবার। এছাড়া শন, তিসি, গাঁজা ইত্যাদি গাছের তন্তুগুলোও বাস্ট ফাইবার।
  • তরুক্ষীর হলো দুধের মত একরকম সাদা, হলুদ অথবা বর্ণহীন আঠালো তরল পদার্থ। তরুক্ষীরে শ্বেতসার, আমিষ, চর্বি, আঠা, উৎসেচক ইত্যাদি থাকে।
  • লম্বালম্বিভাবে সাজানো কতকগুলি লম্বা লম্বা কোষের প্রাচীর গলে গিয়ে যে নালির মত অঙ্গ সৃষ্টি হয়, তাকে তরুক্ষীর নালি বলে। প্রাথমিক ভাজক টিস্যু থেকে এসব নালির সৃষ্টি হয়।
  • যেসব কোষ তরুক্ষীর ধারণ করে তাদের তরুক্ষীর কোষ বলে। এরা ভাজক টিস্যু থেকে উৎপন্ন একটি লম্বা কোষ দ্বারা গঠিত।

 

  • এক বা একাধিক কোষের সমন্বয়ে গঠিত টিস্যু থেকে যখন কোন পদার্থ নিঃসৃত হয়, তখন তাকে গ্রন্থি টিস্যু বলে। গ্রন্থি টিস্যুর উদাহরণ-

 

টিস্যুর প্রকারভেদ (Type of Tissue)

টিস্যু দুই প্রকার – 

১। ভাজক টিস্যু (Merismatic tissue) : যে কোষগুলো বিভাজিত হয় তা হল ভাজক কোষ, আর ভাজক কোষ দিয়ে গঠিত টিস্যুই ভাজক কলা । ভাজক টিস্যুর অপর নাম মেরিস্টেম।

২। স্থায়ী টিস্যু (Permanent tissue) : যে টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে অক্ষম সে টিস্যুকে স্থায়ী টিস্যু বলে। এ টিস্যুর কোষগুলো পূর্ণভাবে বিকশিত এবং সঠিক আকার-আকৃতি বিশিষ্ট অর্থাৎ এরা আকার-আকৃতি ও বিকাশে স্থায়িত্ব লাভ করেছে, তাই এরা স্থায়ী টিস্যু। বিশেষ অবস্থা ছাড়া এরা আর বিকশিত হতে পারে না। ভাজক টিস্যু হতে কোষের পূর্ণ বিকাশ লাভের পর বিভাজন ক্ষমতা স্থগিত হওয়ার মাধ্যমে স্থায়ী টিস্যুর উদ্ভব হয়। 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *