ভারতের সংবিধান

ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও কর্তব্য

মৌলিক অধিকার

ভারতের সংবিধানের তৃতীয় অংশে ১২ থেকে ৩৫ নম্বর ধারায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি উল্লেখ করা হয়েছে । মূল ভারতীয় সংবিধানে ৭ প্রকারের মৌলিক অধিকারের উল্লেখ থাকলেও ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে । বর্তমানে মৌলিক অধিকার ৬টি, যথা— (i) সাম্যের অধিকার, (ii) স্বাধীনতার অধিকার, (iii) শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, (iv) ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার,  (v) সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার, (vi) সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার ।

কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কোনো আইন ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি ক্ষুণ্ণ করতে পারে না, এই বৈশিষ্ট্য বিশ্বের খুব কম সংবিধানেই পরিলক্ষিত হয় । ভারতের সংবিধানের মৌলিক অধিকারগুলি লিখিত ভাবে স্বীকৃতিদানের ফলে নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করেছে । এই অধিকারগুলির মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে । সরকারের কোনও আইন এই অধিকারগুলিকে ক্ষুন্ন করতে পারে না ।

ভারতের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি অবাধ নয় । জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অধিকারগুলির ওপর যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যেমন—

(১) রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানো,

(২) আদালত অবমাননা,

(৩) অশালীনতা প্রভৃতি ঘটনা ঘটলে ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা যায় ।

(৪) বিশেষ পরিস্থিতিতে ভারতরাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলিকে সাময়িক ভাবে নিয়ন্ত্রিত বা খর্ব করতে পারে ।

(৫) দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলে ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলিকে খর্ব করা যায় ।

মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ করার প্রয়ােজনীয়তা

ড: আম্বেদকরের মতে, মৌলিক অধিকারগুলি ব্যক্তিত্ব বিকাশে একান্ত প্রয়ােজন। তাই এগুলি লিপিবদ্ধ করা উচিত। কারণ—
(i) অধিকারগুলি সংবিধানে উল্লেখিত থাকলে সরকার নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে। এগুলি না মেনে চললে নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে কৈফিয়ৎ দিতে হবে।
(ii) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষার জন্যে অধিকারগুলি সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা উচিত। অনেক সময় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থ দেখতে গিয়ে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু সংবিধানে যদি সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ থাকে, তাহলে এ ঘটনা ঘটবে না।
(iii) মৌলিক অধিকারগুলি সংবিধানে নির্দিষ্টভাবে লেখা থাকলে জনসাধারণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে। তাদের কি কি অধিকার আছে জানতে পারবে এবং যদি অধিকারের উপর কেউ হস্তক্ষেপ করে, তাহলে সহজে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
(iv) গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল দলীয় স্বার্থে অন্ধ হয়ে জনগণের অধিকার হরণ করতে চেষ্টা করে। তাদের বাক-স্বাধীনতা, সভাসমিতির স্বাধীনতা প্রভৃতি বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়। মৌলিক অধিকার যদি লিপিবদ্ধ থাকে ও সেগুলি সংরক্ষণের যদি বিশেষ ব্যবস্থা থাকে, তাহলে এ জিনিস সহজে ঘটবে না।
মূল্যায়ন : মৌলিক অধিকারগুলি সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকলেই জনগণ অধিকারগুলি যথার্থভাবে ভােগ করতে পারবে এমন নিশ্চয়তা নেই। যে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য আছে, সেখানে ধনিক শ্রেণি অধিকারগুলি ভােগ করতে পারে। যাদের কিছু নেই তাদের কাছে অধিকার অর্থহীন হয়ে পড়ে। পূর্ণিমার চাঁদ তাদের কাছে ঝলসানাে রুটির মতাে মনে হবে।

শােষণের বিরদ্ধে অধিকার

ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার শপথ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শােষণ বজায় থাকলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে সংবিধানের ২৩ ও ২৪ নং ধারায় শােষণের বিরুদ্ধে অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।
• ২৩ নং ধারা : এই ধারায় বলা হয়েছে,—(ক) মানুষকে নিয়ে কেনাবেচা চলবে না। (খ) বেগার খাটানাে চলবে না ও (গ) জোর করে কাজ করতে বাধ্য করা চলবে না। এর মাধ্যমে নারী ও শিশুদের কেনাবেচা এবং নারীদের পতিতা বৃত্তি ও শিশুদের ভিক্ষা বৃত্তিতে নিযুক্ত করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।


অবশ্য এর ব্যতিক্রম আছে। রাষ্ট্র জনস্বার্থে নাগরিকদের বাধ্যতামূলকভাবে কোনাে কাজ করাতে পারে। যেমন, দেশরক্ষার প্রয়ােজনে সেনাবাহিনীতে যােগ দিতে বাধ্য করাতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম ও বর্ণের ভিত্তিতে কোনাে ভেদাভেদ করা চলবে না।
• ২৪ নং ধারা : এই ধারায় বলা হয়েছে—১৪ বছরের কম বয়সের শিশুদের কলকারখানা, খনি বা অন্য কোনাে বিপজ্জনক কাজে নিয়ােগ করা যাবে না। দারিদ্রের সুযােগ নিয়ে শিশুদের নামমাত্র পারিশ্রমিক দিয়ে মালিকরা যেভাবে তাদের কাজে লাগায়, তা বন্ধ করতে এই ধারায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মূল্যায়ন : শােষণের বিরুদ্ধে অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবে শােষণহীন সমাজ গড়ে তােলা যায়নি। এখনও মহিলা ও শিশুদের কেনাবেচা চলে। ভারতে শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা সরকারি হিসাব অনুযায়ী সাড়ে চার কোটির বেশি। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হলে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে।

সংস্কৃতি ও শিক্ষার অধিকার

শিক্ষা  ছাড়া মানুষের ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ সম্ভব নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন স্টুয়ার্ট মিল (Mill) বলেছেন- সার্বিক ভােটাধিকার দেবার আগে সার্বিক শিক্ষার প্রয়ােজন। প্রকৃতপক্ষে সমাজের উন্নতির মাপকাঠি হল শিক্ষা। তাই সংবিধান রচয়িতারা সংবিধানের ২৯ ও ৩০ ধারায় নাগরিকদের সংস্কৃতি ও শিক্ষার অধিকারকে সুনিশ্চিত করেছেন।


• ২৯ নং ধারা : এই ধারায় বলা হয়েছে—নাগরিকরা নিজেদের ভাষা, লিপি ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের অধিকার ভােগ করবে। তা ছাড়া, সরকারের দ্বারা বা সরকারের আর্থিক সাহায্য পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ম, বংশ, বর্ণ বা ভাষার কারণে কোনাে ব্যক্তিকে প্রবেশের সুযােগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
• ৩০ নং ধারা : এই ধারায় বলা হয়েছে—ধর্ম ও ভাষাভিত্তিক সংখ্যালঘুদের নিজেদের পছন্দমতাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠন করা ও পরিচালনা করার অধিকার থাকবে। সরকার সাহায্য দেবার ব্যাপারে এই ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনাে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না।
মূল্যায়ন : শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকার নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের অধিকার স্বীকৃতির ফলে ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় হবে। কিন্তু সংখ্যালঘুর সংজ্ঞা সুনির্দিষ্টভাবে বলা নেই বলে নানা ধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

সাম্যের অধিকার

রাষ্টবিজ্ঞানের আলােচনায় সাম্যের ধারণা বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে সাম্যের আদর্শ বিভিন্ন যুগে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে ‘সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার’ আদর্শ সারা বিশ্বে ঘােষিত হয়। ঘােষণা করা হয় যে, প্রত্যেক মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করে এবং প্রত্যেকে সমান অধিকার ভােগের অধিকারী। উদীয়মান বুর্জোয়া শ্রেণি সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জনগণের সমর্থন লাভের জন্যে স্বাধীনতা ও সাম্যের আদর্শ প্রচার করেছিল।

ভারতীয় শাসনতন্ত্রের রচয়িতাগণ এই মহান আদর্শের কথা স্মরণ করে প্রস্তাবনায় সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শকে স্থান দেন। সাম্য সম্পর্কিত ধারণাটি ব্যাপক। সাম্য বলতে মানুষে মানুষে অভিন্নতা বােঝায় না। মানুষের যোগ্যতা ও কর্মশক্তির পার্থক্য থাকতেই পারে। অধ্যাপক। অধ্যাপক ল্যাস্কির (Laski) মতে, সাম্য বলতে বিশেষ সুযোগসুবিধার অনুপস্থিতি বোঝায়। অন্য অর্থে বলা যায়, জাতি-ধর্ম, ধনী-নির্ধন, স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের যথােপযুক্ত সুযােগ। সমাজে এমন পরিবেশ গড়ে তুলতে হয় প্রত্যেকে আপন যােগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযােগ লাভ করে। শ্রেণি বিশেষে সুযােগসুবিধা (Special Privilege) থাকলে জনগণের স্বাধীনতা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। সাম্যের মহান আদর্শকে কার্যকর করবার জন্যই ভারতীয় শাসনতন্ত্রে সাম্যের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে

স্বাধীনতার অধিকার

ভারতের সংবিধানের ১৯(১) ধারায় ভারতের নাগরিকদের ছয় ধরনের স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে। মূল সংবিধানের সাত প্রকার স্বাধীনতার অধিকার ছিল। কিন্তু ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ৪৪তম সংবিধান সংশােধনী আইনের সাহায্যে সম্পত্তি অর্জন, ভােগ-দখল ও হস্তান্তরের অধিকার বাদ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে নাগরিকগণ যে ছয় ধরনের স্বাধীনতার অধিকার ভােগ করে সেগুলি হল–
(i) বাক ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা,
(ii) শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার স্বাধীনতা,
(iii) সংঘ বা সমিতি গঠন করার,
(iv) ভারতের ভূখণ্ডের যে-কোনাে স্থানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার,
(v) ভারতের ভূখণ্ডে যে-কোনাে অংশে বসবাস করার ও স্থায়ীভাবে নিবাসী হওয়ার এবং
(vi) যে-কোনাে বৃত্তি অবলম্বন করার অথবা যে-কোনাে পেশা, বাণিজ্য বা ব্যাবসা চালাবার অধিকার ভােগ করার স্বাধীনতা।

বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ : রাষ্ট্র কর্তৃক বন্দি কোনাে ব্যক্তি এই লেখ বা নির্দেশের জন্য আবেদন করলে আদালত এই লেখ জারি করে আটক ব্যক্তিকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত করার জন্য রাষ্ট্রকে নির্দেশ দেয়। আটক বিধিসম্মত না হলে আদালত আটক ব্যক্তিকে মুক্তির নির্দেশ দিতে পারে।

পরমাদেশ বা হুকুমনামা : এই লেখ জারি করা আদালত সরকার, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষকে আইনানুগ ও জনস্বার্থ সম্পর্কিত কর্তব্য পালনে বাধ্য করে থাকে।

প্রতিষেধ : এই লেখ জারি করে নিম্ন আদালতকে তার এক্তিয়ারের অতিরিক্ত কাজ করতে বা বিধিসম্মতভাবে তার উপর ন্যস্ত করা হয়নি এমন কিছু এক্তিয়ারভুক্ত করতে নিষেধ করা হয়।
অধিকার পৃচ্ছা : ‘অধিকার পৃচ্ছা’ কথাটির অর্থ হল ‘কোন অধিকারে’? যখন কোনাে ব্যক্তি যে পদের জন্য যােগ্যতা সম্পন্ন নয়, সেই পদ অধিকার বা দাবি করে তখন অধিকার-পৃচ্ছার সাহায্যে তার দাবি বৈধ কিনা তার অনুসন্ধান করা হয় এবং বৈধ প্রমাণিত না হলে তাকে পদচ্যুত করা হয়।
উৎপ্রেষণ : “উৎপ্রেষণ” কথাটির অর্থ হল বিশেষভাবে জ্ঞাত হওয়া। অধস্তন কোনাে আদালত অথবা বিচার বিভাগীয় ক্ষমতাসম্পন্ন কোনাে প্রতিষ্ঠান নিজ এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে রায় দিলে ঊর্ধ্বতন আদালত উৎপ্রেষণ লেখ জারি করে সেই রায় নাকচ করে দিতে পারে এবং সেইসঙ্গে নির্দেশ দিতে পারে যে নতুন করে বিচারের জন্য মামলাটি উচ্চ আদালতে পাঠানাে হােক।
৩২ ধারা অনুসারে সুপ্রিমকোর্ট এবং ২২৬ নং ধারা অনুসারে হাইকোর্ট লেখ জারি করতে পারে।

মৌলিক অধিকার সংশােধন পদ্ধতি

সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সংশােধন নিয়ে বার বার বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সংবিধানের ১৩ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনাে আইন মৌলিক অধিকারের বিরােধী হলে তা বাতিল হয়ে যাবে। মূল প্রশ্ন হল পার্লামেন্ট মৌলিক অধিকার পরিবর্তন করতে পারে কিনা এবং ৩৬৮ ধারায় পার্লামেন্টের সংবিধান সংশােধনের অধিকারের মধ্যে মৌলিক অধিকার সংশােধন করার ক্ষমতা নির্দিষ্ট আছে কি না? প্রাথমিক অবস্থায় সুপ্রিমকোর্ট স্বীকার করে যে, পার্লামেন্ট মৌলিক অধিকারসহ সংবিধানের যে-কোনাে অংশ সংশােধন করতে পারে।

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে গােলকনাথ মামলায়, সুপ্রিমকোর্ট বিপরীত অভিমত দেয়। বলা হয় পার্লামেন্ট মৌলিক অধিকার সংশােধন করতে পারে না। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের ২৪তম সংশােধন আইনে বলা হয় যে, পার্লামেন্ট সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসহ সকল অংশ সংশােধন করতে পারে। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে মিনার্ভা মিলস মামলায় সুপ্রিমকোর্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, সংবিধান সংশােধনের ক্ষমতা পার্লামেন্টের আছে। কিন্তু পার্লামেন্ট সংবিধানের মৌল কাঠামাে পরিবর্তন করতে পারে না। মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করে নিদের্শমুলক নীতিকে প্রাধান্য দিতে পারে না।

ভারতীয় নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য

মৌলিক কর্তব্য ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকারের উল্লেখ থাকলেও কর্তব্যের কোনাে উল্লেখ ছিল না। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ৪২তম ও ২০০২ খ্রিস্টাব্দের ৮৬তম সংশােধন আইনে কতকগুলি মৌলিক কর্তব্য সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই কর্তব্যগুলি হল-
(i) সংবিধান মান্য করা, সংবিধানের আদর্শ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।
(ii) স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে যে মহান আদর্শ সকল ভারতীয়গণকে অনুপ্রাণিত করেছিল সেই আদর্শ পােষণ ও অনুসরণ করা।
(iii) ভারতের সার্বভৌমিকতা, ঐক্য ও সংহতি সমর্থন ও সংরক্ষণ করা।
(iv) দেশকে রক্ষা করা এবং দেশের সেবায় আহ্বান জানানাে হলে জাতীয় সেবায় আত্মনিয়ােগ করা।
(v) ধর্মগত, ভাষাগত, অঞলগত শ্রেণিবিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বভাব প্রসারিত করা এবং নারীর মর্যাদা হানিকর ব্যবস্থার বিলােপসাধন করা।


(vi) জাতির মিশ্র সংস্কৃতির গৌরবময় ঐতিহ্যের মূল্য স্বীকার ও সংরক্ষণ করা।
(vii) বন, নদী, হ্রদ ও বন্যপ্রাণীসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা এবং জীবনসমূহের প্রতি মমত্ববােধ পােষণ করা।
(viii) বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবিকতাবােধ, অনুসন্ধান ও সংস্কারের মনােভাব গড়ে তােলা।
(ix) সাধারণের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং হিংসার পথ পরিহার করা।
(x) ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত কাজে উৎকর্ষের জন্য সচেষ্ট হয়ে দেশে কর্ম-প্রচেষ্টাকে সাফল্যের উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
(xi) ৬ থেকে ১৪ বৎসর বয়সের শিশুদের পিতা-মাতা বা অভিভাবকগণ তাদের শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযােগ প্রদান করবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *