সিন্ধু নদী

দীর্ঘতম নদী

সিন্ধু

সিন্ধু নদীটি হল ভারতীয় নদী ব্যবস্থার সবথেকে দীর্ঘতম নদী , উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত প্রায় ২৮৮০ কিমি বিস্তৃত, কিন্তু ভারতে অবস্থান মাত্র “৭০৯” কিমি। পৃথিবীর সবচেয়ে “বড় নদী উপত্যকা” এই সিন্ধু নদীতে দেখা যায়।

সিন্ধু নদের বিস্তার পথ

উৎস :

সিন্ধু নদীটি তিব্বতের মানস সরোবরের(এটি টেথিস হিমালয় বা ট্রান্স হিমালয়ের একটি অংশ) কৈলাস পর্বতের, উত্তর ঢালের বোখার-চু (তিব্বতি ভাষায় চু শব্দের অর্থ হিমবাহ ) থেকে সিন্ধু নদীর উৎপত্তি।

 

✏এরপর নদীটি তিব্বতের উত্তর-পশ্চিম বরাবর প্রায় ২৫৭ কিমি প্রবাহিত হয়ে “ধর” নদীতে মিলিত হয় এবং ভারতে প্রবেশ করে। ভারতে প্রবেশ করার আগে পর্যন্ত এই নদীটির নাম ছিল সিং খাবাব (Lion Mouth)।

 

✏এরপর সিন্ধু নদীটি লাদাখের দামচক (Damchak) নামক স্থান দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। লাদাখ ও জস্কার পর্বতের মাঝখান দিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয় । এর পর কারাকোরাম পর্বত শ্রেনীর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে জম্বু কাশ্মীরের কাছে নাঙ্গা পর্বতের কাছে এসে, নদীটি একবারে দক্ষিণ দিকে বেকে গিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে।

✏এরপর নদীটি অনেকটা অংশ সমভূমির উপর প্রবাহিত হয় এবং শেষে পাকিস্তানের করাচির কাছে এসে আরব সাগরে পতিত হয়।

 

সিন্ধুর উপনদী কে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় ১.সিন্ধুর বাম তীরের উপনদী ২.সিন্ধুর ডান তীরের উপনদী

১.সিন্ধুর বাম তীরের উপনদী :

✏সিন্ধু বাম তীরের প্রধান পাঁচটি উপনদী হল বিতস্তা (Jhelum), চন্দ্রভাগা (Chenab), রাভী (Ravi), বিপাশা (Beas), শতদ্রু(Satluj) এছাড়াও উপনদী জাস্কার, সুরু , দ্রাস ইত্যাদি।

1.বিতস্তা (Jhelum) নদী :
উৎস :

কাশ্মীর উপত্যকার দক্ষিণ -পূর্ব দিকে পিরপঞ্জাল পর্বত শ্রেণীর পাদদেশে, ভেরনাগ / শীষনাগ পরিশ্রবণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে ।

 

✏ এরপর নদীটি উত্তর-পশ্চিম দিকে যাত্রা করে এবং শ্রীনগর ও ডাল লেগের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উলার হ্রদের সাথে মিশে, নদীটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয় । এবং উড়ি হ্রদ এর কাছে এসে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানে চন্দ্রভাগা নদীর সাথে মিলিত হয়।

 

এই নদীতে গড়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য প্রকল্প(Project )গুলি হল :

উরি প্রকল্প(The Uri Project): এই প্রকল্পটি জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলা (Baramula) জেলায় ঝিলাম নদীরতে গড়ে উঠেছে।

তুলবুল প্রকল্প (Tulbul project): প্রকল্পটি জম্বু ও কাশ্মীরের ঝিলাম নদীর উপর গড়ে উঠেছে। যেহেতু ঝিলাম নদীটি উলার হ্রদ সাথে মিলিত হয়েছে,এবং এই বাঁধ টি উলার হ্রদ উপর গড়ে ওঠায়, এটি উলার ব্যারেজ ( wular Barrage)নামে পরিচিত ।

 

2. চন্দ্রভাগা (Chenab) নদী :
এটি চন্দ্র ও ভাগা দুটি নদীর মিলিত রূপ।

উৎস :

নদীটি হিমাচল প্রদেশের বারালাচাল ও রোটাং পাশের মাঝখান থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।

✏এরপর নদীটি উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয় এবং জম্মু-কাশ্মীরে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বেঁকে পাকিস্তানে শতদ্রু নদীর সাথে মিশেছে। এটি আয়তনে সবথেকে বড় উপনদী এবং সব থেকে বড় রেলব্রিজ চন্দ্রভাগা নদীর উপরে গড়ে উঠেছে।

এই নদীতে গড়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য প্রকল্প(Project )গুলি হল :

দুলহস্তি প্রকল্প (Dulhasti project) : এই প্রকল্পটি জম্মু-কাশ্মীরে চন্দ্রভাগা (Chenab )নদীতে গড়ে তোলা হয়েছে , এটি হলো একটা নদী ব্যারেজ।

বাগলিহার( Baglihar project) : এই প্রকল্পটি জম্মু-কাশ্মীরে চন্দ্রভাগা (Chenab) নদীতে গড়ে তোলা হয়েছে, এটি হলো একটা নদী ব্যারেজ।

সালাল ( Salal Project ) : এই প্রকল্পটি জম্মু-কাশ্মীরে চন্দ্রভাগা (Chenab) নদীতে গড়ে তোলা হয়েছে, এটি হলো একটা নদী ব্যারেজ।

 

3. রাভী (Ravi) নদী :
উৎস :

হিমাচল প্রদেশের রোটাং পাস এর পশ্চিম দিক থেকে উৎপন্ন হয়েছে রাভী নদী ।

✏এরপর নদীটির উত্তর-পশ্চিম

দিকে প্রবাহিত হয় এবং কাশ্মীরের প্রবেশ করে, এবং সেখান থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে পাঞ্জাব ও জম্বু কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে কিছুটা বয়ে যায় এবং শেষে পাকিস্তানে গিয়ে চন্দ্রভাগা নদীতে গিয়ে মিশে গেছে।

এই নদীতে গড়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য প্রকল্প(Project )গুলি হল :
চামেরা প্রকল্প (Chamera Project ) : এটি একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিমাচল প্রদেশের রাভী নদীতে গড়ে উঠেছে।

থেন প্রকল্প (Thein Project) : এই প্রকল্প চন্দ্রভাগা নদীতে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয় মধোপুরের আগে পাঞ্জাবের পাঠানকোটে, এটা একটি যৌথ প্রকল্প পাঞ্জাব এবং হিমাচল প্রদেশের।

 

4. বিপাশা (Beas) নদী :
উৎস :

হিমাচল প্রদেশের রোটাং পাস এর দক্ষিণে ব্যাস কুণ্ডু থেকে বিপাশা নদীর উৎপত্তি ।

✏এরপর নদীটির পাঞ্জাবের ভিতরে শতদ্রু নদীতে গিয়ে মিশে গেছে।এটি সিন্ধুর এমন উপনদীর যেটি ভারতে উৎপত্তি এবং ভারতে শেষ।

 

এই নদীতে গড়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য প্রকল্প(Project )গুলি হল :

পং প্রকল্প (Pong project) : এই প্রকল্পটি হিমাচল প্রদেশের বিপাশা (Beas) নদীর ওপর পং বাঁধ গড়ে উঠেছে, এই বাঁধের পিছনের জলাধার মহারানা প্রতাপ সাগর নামে পরিচিত।

 

5. শতদ্রু (Satluj) নদী :
উৎস : তিব্বতের মানষ সরোবরের রাক্ষস তল সরোবর থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।

সিন্ধু নদী ( The Indus river System) সম্পূর্ণ আলোচনা
শতদ্রু(Satluj) নদী

✏এরপর নদীটি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয় এবং পাঞ্জাবে প্রবেশ করে এবং পাঞ্জাব ও পাকিস্তানের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সিন্ধু নদীতে মিশে গেছে (এটি এমন নদী যেটি সরাসরি সিন্ধু নদীর সাথে মিশেছে)। এটি সিন্ধুর সব থেকে দীর্ঘতম উপনদী ।

এই নদীতে গড়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য প্রকল্প(Project )গুলি হল :
ইন্দিরা গান্ধী প্রকল্প (Indira Gandi Project) : এই প্রকল্প টি গড়ে উঠেছে পাঞ্জাবে বিপাশা (Beas) ও শতদ্রু(Satluj) নদীতে। বিপাশা ও শতদ্রু মিলিত স্থানে গড়ে উঠেছে হাঁড়িকে বাঁধ। এই বাঁধ থেকে উৎপত্তি হয়েছে ইন্দিরা গান্ধী ক্যনেল । এটি ভারতের দীর্ঘতম ক্যনেল (468 km) এটি সুদূর রাজস্থান পর্যন্ত বৃস্তৃত। এই ক্যনেলের ফলে রাজস্থানের খরা প্রবণ এলাকাতেও চাষের উপযোগী হয়েছে। এটি রাজস্থানের গঙ্গানগর ( Ganganagar ) জেলাতে সবুজ বিপ্লবের (Green Revolution)সঞ্চার ঘটিয়েছে।

ভাকরা নাঙ্গাল প্রকল্প (Bhakra Nangal Project ) : ভাকরা নাঙ্গাল প্রকল্পটি ভারতের সবথেকে বড় বহুমুখী নদী পরিকল্পনা । এটি গড়ে উঠেছে শতদ্রু নদীর উপর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাঁধ উচ্চতা প্রায় ২২৬ মিটার ভাকরা অবস্থিত হিমাচল প্রদেশে এবং নাঙ্গাল অবস্থিত চন্ডিগড়ে । ভাকরা থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় এবং নাঙ্গাল থেকে সেচের জন্য জল সরবরাহ করা হয়। ভাগড়া বাঁধের পেছনে জলধারা গোবিন্দ সাগর নামে পরিচিত (এটি হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত) এখান থেকে পাঞ্জাব হরিয়ানা হিমাচল প্রদেশ ও রাজস্থানে জল সরবরাহ হয়।

সিন্ধুর প্রধান পাঁচটি উপনদী (দেশভাগের পূর্বে) পাঞ্জাবের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পাঞ্জাবকে পঞ্চ নদীর দেশ বলা হয়। কিন্তু বর্তমান ভারতে দেশ ভাগের পর পাঞ্জাবের ওপর দিয়ে মাত্র ৩টি নদী প্রবাহিত হয়েছে । এই উভয় নদী শতদ্রু নদীতে মিলিত হয়ে পাকিস্তানে সিন্ধু নদীর সাথে মিশেছে মিলিত স্থানটি “মিঠানকোট” নামে পরিচিত।

 

 

২.সিন্ধুর ডান তীরের উপনদী :

শায়ক, নোবরা গিলগিট, হুঞ্জা(এগুলি ভারতের উৎপত্তি) এই নদীগুলি কারাকোরাম পর্বত শ্রেণী থেকে উৎপত্তি এবং কাবুল, (আফগানিস্তানে উৎপত্তি )কুররম, তোচি, জোব, গোমাল(পাকিস্তানে উৎপত্তি ) এগুলি সুলেমান পর্বত থেকে উৎপত্তি হয়ে উভয় নদী সিন্ধুর ডান দিক থেকে এসে মিশেছে।

সিন্ধু নদীর ইতিহাস

সিন্ধু উপত্যকা নদীর ধারে উর্বর প্লাবনভূমিতে অবস্থিত । এই অঞ্চলটি প্রাচীন সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার আবাসস্থল ছিল, যা ছিল প্রাচীনতম পরিচিত সভ্যতার একটি। প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রায় 5500 খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হওয়া ধর্মীয় অনুশীলনের প্রমাণ উন্মোচন করেছেন এবং প্রায় 4000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে কৃষিকাজ শুরু হয়েছিল। প্রায় 2500 খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই অঞ্চলে শহর এবং শহরগুলি বেড়ে ওঠে এবং সভ্যতা 2500 থেকে 2000 খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে তার শীর্ষে ছিল, ব্যাবিলনীয় এবং মিশরীয়দের সভ্যতার সাথে মিলে যায়।

উল্লেখযোগ্য শহর—

বিতস্তা নদীর তীরে শ্রীনগর, শতদ্রু নদীর তীরে ভাকরা প্রভৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *