লিখন পদ্ধতি আবিস্কারের
পূর্বের সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলে। মানব ইতিহাসে যে অংশে কোন লিখিত বিবরণ নেই বা পাওয়া যায় না সেই সময়কালকে প্রাক-ইতিহাস বা প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলে । প্রত্নতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিচারে প্রায় ২৫ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হয়েছে।তবে সাধারণ ভাবে ধরে নেয়া হয় মানুষ খ্রীস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে লিখনপদ্ধতি আবিষ্কার করেছে।লিখন পদ্ধতি আবিস্কারের পূর্বের এই সময়কাল হল প্রাগৈতিহাসিক যুগ। এর বিভাজন এইরুপ.
১.প্রস্তর পূর্ব যুগ(Eolithic Age) :
১০ লক্ষ খ্রীস্টপূর্ব থেকে শুরু করে ৩ লক্ষ খ্রীস্টপূর্ব পর্যন্ত সময়কাল। এ যুগের মানুষের মধ্যে পিকিং ও জাভা মানুষ উল্লেখযোগ্য। এ সময় মানুষ পাথরের ব্যবহারের সূচনা করে।
২.পুরোপলীয় প্রস্তর যুগ / পুরনো পাথরের যুগ (paleolithic age) :
৩ লক্ষ খ্রীস্টপূর্ব থেকে শুরু করে ১০ হাজার খ্রীস্টপূর্ব পর্যন্ত সময় কালকে পুরোপলীয় প্রস্তর যুগ বলে।
এ সময় মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রহকারী। তারা দলগত ভাবে শিকার করত। যাযাবর জীবন যাপন করলেও তারা অস্থায়ী বাসস্থান গড়ে তুলেছিল। গাছের বাকল ও পশুর চামড়া দিয়ে শীত নিবারন করা শিখেছে। মানুষ এ সময় পাথরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শেখে।এ যুগের প্রধান আবিষ্কার আগুন।
২. মধ্যপ্রস্তর যুগ ( Mesolithic Age): খ্রীস্টপূর্ব ১০০০০ অব্দ থেকে আনুমানিক ৮০০০ খ্রীস্টপূর্ব পর্যন্ত সময় কাল। এসময় মানুষ পশুপালন শুরু করে। ডাল বাকলের ঘর তৈরি করতে শেখে। পাথরের সূক্ষ্ণ অস্ত্র তৈরি করতে শেখে। শিল্পকলার বিকাশ ঘটে।
৩.নবোপলীয় যুগ / নুতন পাথরের যুগ (Neolithic Age) :
একে নবোপলীয় বিপ্লব নামেও অবিহিত করা হয়। বিভিন্ন স্থানে মধ্যপ্রস্তর যুগের অবসানের পর খ্রীস্টপূর্ব ৭০০০/৬০০০/৫০০০ অব্দে এর সূচনা এবং স্থানভেদে খ্রীস্টপূর্ব ৪০০০/৩০০০ অব্দে লিখন পদ্ধতি আবিস্কারের পর এর সমাপ্তি ঘটেছে।
এ যুগের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হল মানুষ এসময় কৃষি কাজের সূচনা করে। ফলে খাদ্য সংগ্রহকারী মানুষ এ যুগে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিনত হয় যা মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লব। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা চাকার আবিষ্কার,মৃৎপাত্রের ব্যবহার, বয়ন শিল্পের বিস্তার,গ্রামের উদ্ভব, রাস্ট্রের উদ্ভব,শ্রেণিভেদ প্রথার সূচনা, স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি, বিনিময় প্রথা চালু, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার প্রথা চালু, নৌযান ও পালের ব্যবহার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।এই সময়গুলিকে একত্রে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়েছে