সিন্ধু ও আর্য
একটি তত্ত্ব প্রস্তাব করেছে যে যাযাবর, ইন্দো-ইউরোপীয় উপজাতি, যাকে আর্য বলা হয়, সিন্ধু সভ্যতা আক্রমণ ও জয় করেছিল।
অনেক পণ্ডিত এখন বিশ্বাস করেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সিন্ধু সভ্যতার পতন ঘটেছে।
বর্ষার পূর্বমুখী স্থানান্তরের কারণে জল সরবরাহ কমে যেতে পারে, যা সিন্ধু নদী উপত্যকার হরপ্পানদের স্থানান্তর করতে এবং ছোট গ্রাম এবং বিচ্ছিন্ন খামার স্থাপন করতে বাধ্য করে।
এই ছোট সম্প্রদায়গুলি শহরগুলিকে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি উদ্বৃত্তগুলি তৈরি করতে পারেনি, যা তখন পরিত্যক্ত হয়েছিল।
আধুনিক ভারত ও পাকিস্তানে অবস্থিত মহান সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা 1800 খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে হ্রাস পেতে শুরু করে। সভ্যতা শেষ পর্যন্ত তার দুটি মহান শহর মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পা সহ বিলুপ্ত হয়ে যায়। হরপ্পা সিন্ধু উপত্যকার লোকেদের জন্য এর নাম ধার দেয় কারণ এটি ছিল সভ্যতার প্রথম শহর যা আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিকদের দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে মেসোপটেমিয়ার সাথে বাণিজ্য, যা মূলত আধুনিক ইরাকে অবস্থিত, মনে হয় শেষ হয়ে গেছে। মহান শহরগুলির উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং স্নানগুলি তৈরি করা হয়েছিল বা অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। লেখা অদৃশ্য হতে শুরু করে এবং বাণিজ্য ও কর আদায়ের জন্য ব্যবহৃত প্রমিত ওজন ও পরিমাপ ব্যবহারের বাইরে পড়ে যায়।
পণ্ডিতরা হরপ্পাদের অন্তর্ধান ব্যাখ্যা করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে একটি আর্য আক্রমণ এবং অপ্রতিরোধ্য বর্ষা দ্বারা চিহ্নিত জলবায়ু পরিবর্তন।
আর্য আক্রমণ তত্ত্ব (C. 1800-1500 BC)
আক্রমণের কারণে সিন্ধু সভ্যতার অবসান ঘটতে পারে। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক মর্টিমার হুইলারের একটি তত্ত্ব অনুসারে, যাযাবর, ইন্দো-ইউরোপীয় উপজাতি, যাকে আর্য বলা হয়, হঠাৎ করে অভিভূত হয়ে সিন্ধু নদী উপত্যকা জয় করে।
হুইলার, যিনি 1944 থেকে 1948 সাল পর্যন্ত আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর-জেনারেল ছিলেন, তিনি মনে করেন যে মহেঞ্জোদারো প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটের শীর্ষ স্তরে পাওয়া অনেকগুলি কবরহীন মৃতদেহ যুদ্ধের শিকার হয়েছিল। তত্ত্বটি প্রস্তাব করেছিল যে শান্তিপূর্ণ হরপ্পাবাসীদের বিরুদ্ধে ঘোড়া এবং আরও উন্নত অস্ত্র ব্যবহার করে আর্যরা তাদের সহজেই পরাজিত করতে পারে।
তবুও হুইলার তার তত্ত্বটি উত্থাপন করার কিছুক্ষণ পরেই, অন্যান্য পণ্ডিতরা এটিকে নাকচ করে দিয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে কঙ্কালগুলি আক্রমণাত্মক গণহত্যার শিকার ছিল না, বরং তাড়াহুড়ো করে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। হুইলার নিজেই শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেছিলেন যে তত্ত্বটি প্রমাণিত হতে পারেনি এবং কঙ্কালগুলি মানুষের পেশার একটি চূড়ান্ত পর্যায়ের ইঙ্গিত দেয়, শহরের কাঠামোর ক্ষয় সম্ভবত এটি জনবসতিহীন হওয়ার ফলে।
পরবর্তীতে আক্রমণ তত্ত্বের বিরোধীরা এতদূর গিয়ে বলে যে 1940-এর দশকে উত্থাপিত ধারণার অনুগামীরা সূক্ষ্মভাবে ব্রিটিশ সরকারের অনুপ্রবেশের নীতি এবং পরবর্তীকালে ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের ন্যায্যতা প্রমাণ করছে।
সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন উপাদান পরবর্তী সংস্কৃতিতে পাওয়া যায়, যা থেকে বোঝা যায় সভ্যতা আক্রমণের কারণে হঠাৎ করে বিলুপ্ত হয়নি। অনেক পণ্ডিত ইন্দো-আর্য মাইগ্রেশন তত্ত্বে বিশ্বাস করেছিলেন যে বলে যে হরপ্পা সংস্কৃতি উত্তর-পশ্চিম ভারতে আর্য জনগণের অভিবাসনের সময় আত্মীকৃত হয়েছিল।
সিন্ধু সভ্যতার কালপর্ব খ্রিষ্টপূর্ব ২৮০০ অব্দ থেকে শুরু হয়ে খ্রিষ্টপূর্ব ১৭০০ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তবে বিস্তৃতি সাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা মতভেদ থাকলেও, তা সিন্ধু সভ্যতার অন্যান্য বিষয়কে তেমন প্রভাবিত করছে না। প্রাগৈতিহাসিক এই সভ্যতার কেন্দ্রস্থল ছিল প্রাচীন ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলের সিন্ধু অববাহিকায়। পরবর্তীতে তা বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ঘগ্গর নদী উপত্যকায়। অনেকের দাবি, সিন্ধু সভ্যতার উত্থান ঘটেছিল আর্যদের হাত ধরেই। দাবিটি কি আদৌ সঠিক?
ভারতবর্ষে ৮০ হাজার থেকে ৬৫ হাজার বছর পূর্বে মানবজাতি বসতি গড়েছিল। তবে নিশ্চিত হয়ে বলা যায়, তারা আধুনিক সভ্যতার জনক ছিল না। নিদেনপক্ষে তারা বনে-জঙ্গলে আর পাহাড়ের গুহায় বাস করতো। খাদ্যের মূল উৎস ছিল পশু শিকার এবং গাছের ফলমূল। ভারতবর্ষ আধুনিক সভ্যতার যাত্রা শুরু করে পাঁচ হাজার বছর আগে। সামসময়িক যুগে দজলা-ফোরাতের অববাহিকায় প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতা, নীল নদের তীরে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতাসহ কয়েকটি অঞ্চলে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হলো, প্রাচীন ভারতবর্ষের এই সভ্যতার জনক কারা? হরপ্পায় যে সকল নরকঙ্কালের সন্ধান মিলেছে, সেগুলো বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, অনেক ছোট ছোট জাতি সে অঞ্চলে বহু আগে থেকেই বসবাস করতো। এদের মধ্য থেকে একদল এসেছিল ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে। তাদের আবাসস্থল ছিল পশ্চিম এশিয়া। সম্ভবত তারা প্রোটো-দ্রাবিড় গোষ্ঠী ছিল।
সিন্ধু সভ্যতা আর্যদের অবদান কিনা তা জানতে হলে সর্বপ্রথম জেনে নিতে হবে আর্য এবং অনার্য সম্পর্কে। ‘ভারতীয় সভ্যতার বিকাশের ধারা‘ বইয়ে উল্লেখ করা আছে,
আর্যরা কোনো জাতি নয়। আর্য হলো এক ভাষাগোষ্ঠীর নাম। সকল ইন্দো-ইয়োরোপীয় ভাষাভাষীদের আর্য বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এরা বসবাস করত প্রাচীন ইরাক, ইরান, মধ্য এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ, গ্রিস, ইত্যাদি অঞ্চলে। এদের মধ্যে একটা অংশ একসময় ইউরোপের দিকে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। আর এক অংশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান হয়ে প্রাচীন ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। ঠিক এই কারণেই, মধ্য এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ এবং ভারতীয় উপমহাদেশে পৌরাণিক দেব-দেবী, প্রাচীন শিল্প, ভাষা ও শব্দে বহু সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
এদেরকেই মূলত আর্য বলা হয়। স্বাভাবিকভাবে যারা আর্য নয়, তারাই অনার্য।
আর্যরা ভারতবর্ষে তাদের প্রথম পদচিহ্ন রেখেছিল আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে। তখন সিন্ধু সভ্যতা বিকাশের অন্তিম বা অন্তিম মধ্য পর্যায় চলমান। আর্যরা ভারতের দোয়াব অঞ্চলে সর্বপ্রথম নিজেদের আস্তানা গেড়েছিল। মহেনজোদারোর খননকার্য থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনকে কার্বন ডেটিং করে জানা গেছে, সিন্ধু সভ্যতা পূর্ণ পরিণতি লাভ করেছিল খ্রিষ্টপূর্ব বাইশ শতকে এবং তার ক্রমবিকাশ অব্যাহত ছিল খ্রিষ্টপূর্ব আঠারো শতক পর্যন্ত। হরপ্পাবাসীরা নগর নির্মাণে দক্ষ ছিল। অপরদিকে আর্যরা নগর সভ্যতা ধ্বংস করত। আর্যদের ধর্মগ্রন্থের নাম হলো বেদ। ঋগ্বেদে পুর বা নগর ধ্বংসের কাহিনী বিবৃত আছে। ঋগ্বেদ অনুযায়ী, আর্য দেবতা ইন্দ্রের নাম হলো পুরন্দর। এই পুরন্দর শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়, ‘নগর ধ্বংসের দেবতা’। যেহেতু পুরন্দর নগর ধ্বংস করেন, তাই প্রত্নতত্ত্ববিদ হুইলারের মতে, নগরজীবনের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণকারী আর্যগোষ্ঠী স্বীয় দেবতা ইন্দ্রের নেতৃত্বে হরপ্পা সভ্যতার উপর অন্তিম আঘাত হানে। তবে হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংসের পেছনে শুধু আর্যদেরকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা যায় না। হরপ্পা আগে থেকেই অর্থনীতিসহ বিভিন্ন দিকে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গিয়েছিল।
হরপ্পাবাসীরা শিশ্নের উপাসনা ও মাতৃকা দেবীর পূজা করত। অপরদিকে আর্যরা লিঙ্গ পূজা ঘৃণা করত। আর্যরা বেদ নিয়ে এসেছিল ভারতবর্ষে। মাতৃকা দেবীর পূজার বিষয়ে ঋগ্বেদে কোনোকিছু উল্লেখ নেই। আর্যরা নিয়মিত দেবতাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ দিতো। ওই যজ্ঞে ব্যবহৃত কোনো উপকরণের সন্ধান আজ পর্যন্ত হরপ্পা সভ্যতার প্রত্নস্থল থেকে পাওয়া যায়নি।
প্রাচীন ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম ঘোড়া নিয়ে এসেছিল আর্যরা। কিন্তু হরপ্পার কোনো প্রত্নক্ষেত্র থেকে এখন অবধি কোনো ঘোড়ার কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়নি। শিব বর্তমান সনাতন ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ একজন দেবতা হলেও, শিব ছিল মূলত হরপ্পাবাসীদের দেবতা। হরপ্পার প্রত্নস্থল থেকে শিবের স্মারক পাওয়া গেছে। ‘শিব’ শব্দের সন্ধান মিলেছে দ্রাবিড় ভাষাভাষী মানুষের শব্দভাণ্ডার থেকে। বৈদিক সমাজে শিবের আরাধনা সম্ভবত হরপ্পাবাসীদের থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল। মৃতদেহকে আগুনে দাহ করার রীতি চালু ছিল আর্যদের মধ্যে। কিন্তু হরপ্পাবাসীরা মৃতদেহকে মাটির নিচে সমাহিত করে দিত। হরপ্পাবাসীদের মধ্যে লিপির প্রচলন থাকলেও আর্যদের কোনো লিপির প্রচলন ঘটেনি না তখনও। তারা বৈদিক সাহিত্যের শ্লোক কণ্ঠস্থ করত। আর্যদের মাঝে লিপি সূত্রপাত ঘটে আরও কয়েক শতাব্দী পর। হরপ্পাবাসীরা ব্যবসায় পটু ছিল। তারা ছিল বণিক জাতি। পারস্য উপসাগর দিয়ে মেসোপটেমিয়া, মিশরের সাথে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। অপরপক্ষে, আর্যরা ছিল যোদ্ধা জাতি। তারা ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধের পাশাপাশি স্পোক যুক্ত চাকা ব্যবহার করত। তারা তীর-ধনুক ব্যবহারেও ছিল পটু।
হরপ্পা সভ্যতা ছিল কৃষিভিত্তিক। আর্যরা কোনো কৃষিকাজ জানত না। তারা অগ্নিপূজা, পশুবলি ও অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন। এটা শতপথ ব্রাহ্মণের [ ২ | ৩ | ৭-৮ ] এক উক্তি থেকেই জানা যায়। সেখানে বলা হয়েছে,
প্রথমত দেবতারা একটি মানুষকে বলি হিসেবে উৎসর্গ করলেন। উৎসর্গীকৃত আত্মা অশ্ব দেহে প্রবেশ করার পর দেবতারা অশ্বকে উৎসর্গ করলেন। উৎসর্গীকৃত আত্মা অশ্ব দেহ থেকে পুনরায় ষাঁড়ের দেহে প্রবেশ করল। ষাঁড়কে উৎসর্গ করা হলে, ওই আত্মা মেষে প্রবেশ করানো হলো। মেষ উৎসর্গীকৃত হলে উহা ছাগ দেহে প্রবিষ্ট হলো। এরপর ছাগ উৎসর্গীকৃত হলে তা পৃথিবীতে প্রবেশ করল। দেবতারা পৃথিবী খনন করে গম ও যব আকারে ওই আত্মাকে পেলেন। এরপর থেকে সকলেই শস্যাদি কর্ষণ দ্বারা পেয়ে থাকে।
শতপথ ব্রাহ্মণের এই অংশটুকু অত্যন্ত অর্থবোধক। কারণ, এর খোলসেই মুড়িয়ে আছে আর্যদের কৃষ্টির ইতিহাস। এর বিশ্লেষণ থেকে জানতে পারা যায়, আর্যরা প্রথমে ভূমি-কর্ষণ দ্বারা ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত ছিল না। তারা ছিল যাযাবর, এবং শীতপ্রধান কোনো দেশে ছিল তাদের বাসস্থান। শরীরকে উষ্ণ রাখার উদ্দেশ্যে তারা মাংস ভক্ষণ ক
রত। যজ্ঞে উৎসর্গীকৃত প্রাণীদের মাংস তারা ভক্ষণ করত। ভারতবর্ষে পদার্পণের পর অশ্বমেধ যজ্ঞই ছিল তাদের প্রধান যজ্ঞ। অপরদিকে হরপ্পা সভ্যতার লোকেরা ছিল মৎস্যভোজী। আবার আর্যরা মৎস্য ভক্ষণ করত না। এই হরপ্পাবাসীদের থেকেই আর্যরা কৃষিকাজের কৌশল রপ্ত করেছিল।
হরপ্পা সভ্যতা যে আর্যদের দান নয়, তার জ্বলন্ত প্রমাণ বহন করছে ওই সময়ের মৃৎশিল্প। আর্য সভ্যতা যেখানে বিকশিত হয়েছিল, সে অঞ্চলে মৃৎপাত্রের রঙ ছিল গাঢ় ধূসর বর্ণের। অপরদি
কে, হরপ্পা সভ্যতা থেকে যে সকল মৃৎপাত্র উদ্ধার করা গেছে, সেসবের রঙ ছিল কালো আর লাল। হরপ্পা সভ্যতায় পোড়া ইটের ব্যবহার ছিল প্রচুর। কিন্তু পোড়া ইট কীভাবে বানাতে হয় তা আর্যরা জানত না। হরপ্পা সভ্যতা ছিল মাতৃপ্রধান। কিন্তু বৈদিক সভ্যতা ছিল পুরুষপ্রধান। হরপ্পা সভ্যতা যে আর্যরা গড়ে তোলেনি, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো ডিএনএ পরীক্ষা। কঙ্কালের ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে হরপ্পায় প্রান্ত কঙ্কাল আর্যভাষীদের বলে প্রমাণিত হয়নি। ওইখানে যে কঙ্কাল পাওয়া গেছে তারা মূলত, প্রোটো অস্ট্রালয়েড, মঙ্গোলয়েড, এবং আলপিয়ান জনগোষ্ঠীর মানুষের।
এ থেকেই প্রতীয়মান হয়ে যে, সিন্ধু সভ্যতা আর্যরা গড়ে তুলেনি, এবং এর বহু আগেই এখানে বসবাসরত মানুষের তিলে তিলে সেই নগর সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। সিন্ধু উপত্যকায় সিন্ধু সভ্যতার যে জ্বলন্ত স্ফুরণ ঘটেছিল, তার ভিতরে ছিল অজস্র পরিশ্রমী মানুষদের হাতের ছোঁয়া। একদল সুদক্ষ কর্মীর আবেগ, উদ্দীপনা, ও নির্মল প্রেরণার প্রাণপ্রাচুর্যে পরিপূর্ণ ছিল এই বিস্তীর্ণ ভূমি। যার রুচিশীলতার ছাপ সিন্ধু সভ্যতার নগর ধ্বংসাবশেষে হাজার বছর পরেও বিদ্যমান।
Post Views: 28