অনেকেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পুতুলনাচের ইতিকথা”
, “পদ্মানদীর মাঝি” “দিবারাত্রির কাব্য” প্রভৃতি উপন্যাসের কথা বলেন আর ছোট গল্পের মধ্যে “পাশফেল” বোধ হয় জনপ্রিয়তায় ছাপিয়ে যাবে রবীন্দ্রনাথের “ দেনাপাওনা “ কে।
তবে আমার সব থেকে ভাল লাগে “ সরীসৃপ “ আর “ প্রাগৈতিহাসিক “। গল্প দুটিতে আমরা একটি বিষয়গত সাদৃশ্য দেখি যে মানুষের একটি আদিম রিপু হল কুম্ভীলকবৃত্তি বা পাতি বাংলায় পরের জিনিষ হাতিয়ে নিয়ে নিজে ভোগ করা। ডাকাত প্রকাশ্যে , বলপ্রয়োগ করে মানুষের ধন ছিনিয়ে নেয় আর শিক্ষিত ব্যক্তি সরীসৃপের মত সন্তর্পনে গৃহে প্রবেশ করে গৃহস্থের ক্ষতি করে। তীব্র জড়বাদী কলম বিপন্ন মানবতার ছবি এঁকেছে মানিকের গল্পে , উপন্যাসে আবার কখনও সৃষ্টি করেছে স্যুররিয়ালিজম। নৈতিকতার অবক্ষয় যে সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে , পুঁথিগত বিদ্যা যে মানুষকে একটি অর্বাচীন , অশিক্ষিত , হিংস্র ডাকাতের চাইতে ভাল কিছু তৈরি করে না তা এই দুটি গল্পের প্লট তুলনা করলেই বোঝা যাবে।
মানিকবাবুর হতাশাদগ্ধ গদ্যের উৎস কি ছিল ? ব্যক্তিগত দারিদ্র নাকি ভারতীয় উপমহাদেশের সামাজিক অবক্ষয় এবং শ্রেনীভিত্তিক শোষণ ? যেটাই হোক , অনাহারে এবং বিনা চিকিৎসায় বাংলার সাহিত্যাকাশের এই অন্যতম নক্ষত্রটির অকালপতনের দায় দেশবাসীকেই নিতে হবে ।