বরেন্দ্র ভূমিতে মাহিষ্য বিদ্রোহের বিজয় স্তম্ভ দিব্যক স্তম্ভঃ | ১ম–পর্ব।

বরেন্দ্র ভূমিতে মাহিষ্য বিদ্রোহের বিজয় স্তম্ভ দিব্যক স্তম্ভঃ
[নিজদেশের ইতিহাস,প্রাচীনকীর্তি,লোক সাহিত্য বা যে কোন কিংবদন্তী আমাদের ঐতিয্য।নওগাঁ জেলার অধিকাংশ ভু-ভাগ ঐতিয্যময় বরেন্দ্র ভুমির অংশ।নওগাঁ জেলার অনেক থানা ব্রিটিশ আমলে রাজশাহী, দিনাজপুর বগুড়া জেলার অংশ ছিল।পরবর্তীতে গাঁজা চাষের উপযুক্ত হওয়া কারনে ইংরেজরা ঐসব জেলার থানাগুলি যা  রাজশাহী জেলার নিয়ামতপুর, মান্দা,দিনাজপুরে জেলার মহাদেবপুর,পত্নীতলা ,ও ধামুই হাট   থানা গুলো নিয়ে নতুন নওগাঁ মহকুমার গঠন করা হয় পরবর্তীতে নওগাঁ জেলায় রুপান্তরিত হয়।
মহাদেবপুর থানা আমার পিতার জন্মস্থান,মায়ের ও জন্মস্থান, আমার বিবাহ এই থানায় হওয়ার কারনে এখান কার ইতিহাস ঐতিয্য আমাকে আকৃস্ট করেছিল।ইতিহাসের বিশাল সম্ভার বলা যায়। যা প্রায় সব গুলো দেখেছি যেনেছি  আর অবাক হয়েছি।এত গল্প কাহিনী যা আগে বইতে পড়েছি তা এখন চোখের সামনে ভেসে রয়েছে। ছোট বেলায় এ অঞ্চল সম্পর্কে মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছিল ইতিহাস জানতে গিয়ে সব গুলোর উত্তর পেয়ে গেছি। আমার মামা বাড়ি মহাদেব
পুর  থানার সরস্বতীপুর গ্রামে। সেই সময়  সরস্বতী পুর,তার আসে পাশের গ্রাম গুলো ভীমপুর,শ্যামপুর,অর্জুন,কৃষ্ণপুর,লক্ষীপুর,সতীহাট, পাঁঠাকাটা,বলিহার এমনি তরো সব নাম। আবার সরস্বতীপুরে পাঠান বংশ আমার মামাদের বংশ, পাঠান লোকদের কথা তো বইতে পড়েছি সে অনেক দুরের  অধিবাসী এখানে এলো কি করে?এখন যানলাম  মোঘল সেনাপতি  মানসিংহ সেই সুদুর দিল্লী হতে বাংলার বারো ভুঁইঞা দের বিদ্রোহ দমন করার জন্য  সরস্বতীপুর বলিহার রাজবাড়ীর কাছে বিশ্রামের জন্য কিছুদিন অবস্থান নিয়েছিলেন।সেনাপতির সাথে অনেক পাঠান যোদ্ধা ও সাথে এসেছিলেন।সেনাপতি  সৈন্যদের বসিয়ে না রেখে বলিহার  ও সরস্বতীপুর অঞ্চলে ৩৬০ ছোট বড় পুকুর খনন করেছিলেন। কয়েক টা পুকুরের  নাম  খুব সুন্দর রেখেছিলেন।
শুধু  গৌড় রাজ্য বরেন্দ্র ভুমির কারনে এখানে জৈন, বৌদ্ধ,হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল যার স্থাপত্যর ধ্বংসাবশেষ ও অপূর্ব নিদর্শনের ইতিহাস আজ ও দেখতে পাওয়া যায়।নওগাঁর  ইতিহাস ঐতিয্য  পাহারপুরের সোমপুর বিহার,হলুদ বিহার, অগ্রপুর বিহার, কুশুম্বা মসজিদ, দীবর দীঘি, বৌদ্ধ স্থাপনায় চান্দর ও আরানগর, মুসলিম স্মৃতি বিজরিত মাহিগন্জ বা মাহি সন্তোষের প্রাচীন কীর্তি, মঙ্গল বাড়ির ভীমের পান্টি, সরস্বতীপুরে কাছে বকাপুরে ভীম সাগর ও ভীমের জাঙ্গাল, নিয়ামতপুরের নিম দীঘির ইতিহাস প্রসিদ্ধ কালাপাহারের বাসস্থান ও ভাঙ্গা মসজিদের ইতিহাস দুবল হাটি শিকার পুরের বড় দরগা, রানী নগর থানার বিরাট খান পুকুর,ছাড়া ও বলিহার রাজবাড়ি,দুবলহাটি রাজবাড়ি, মহাদেবপুর রাজ বাড়ি, কাশিমপুর রাজবাড়ি আমার গ্রামের লাগোয়া মহেশপুর রাজবাড়ি  যার  পূর্ব ইতিহাস এখন খুঁজে পাই নাই।]
বরেন্দ্র ভুমির অধিবাসীগন তখন সুখী ও সমৃদ্ধশালী জতি হিসাবে সমগ্র ভারতের নজর কেরেছিল। একাদশ শতাব্দীর কবি সন্ধ্যাকর নন্দী তাঁর ‘রাম চরিতম’ কাব্যে বরেন্দ্র ভুমিকে “বসুধার শীর্ষস্থান”বলে উল্লেখ করেছেন। খ্রীঃ ৭ম শতাব্দীতে বৌদ্ধ ধর্মীয় পাল  রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়। খ্রীঃ ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে পাল বংশের তৃতীয় রাজা ধর্মপাল ও তদীয় পুত্র দেবপাল কনৌজ পর্যন্ত সমগ্র গাঙ্গেয় উপত্যকা সহ বিহার ও উত্তর বাংলায় এক বিরাট সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। পাল রাজাদের পৃস্টপোষকতায় বাংলায় এত বৌদ্ধ বিহার  সংঘরাম চৈত্য ও মন্দির  নির্মান করেন।]
 ইতিহাসের কৈবর্ত বিদ্রোহঃ
খ্রীঃ ৯ ম শতাব্দীর শেষভাগে গুর্জুর – রাজ ভোজ পাল সাম্রাজ্য আক্রমন করেছিলেন। পাল বংশীয় মহীপাল খ্রীঃ ১০ম শতাব্দীর শেষ ভাগে হৃত পাল সাস্রাজ্য অধিকার করে সাম্রাজ্যর পুর্ব গৌরব ফিরিয়ে আনেন। দ্বাদশ শতাব্দীতে পাল বংশীয় রাজা দ্বিতীয় মহীপাল অত্যন্ত অত্যাচারী হওয়ার কারনে উত্তর বাংলা প্রজাগন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং সম্মুখ যুদ্ধে তাকে হত্যা করেন। এই মাহিষ্য  বা কৈবর্ত্য  বিদ্রোহ পরিচালনা করেন  দিব্যক বলে একজন মাহিষ্য প্রজা।।
পরে প্রজা সকল তাঁকে বরেন্দ্রীয় অঞ্চলে  রাজা নির্বাচন করেন। রাজা দিব্যক অত্যন্ত কর্মনিষ্ঠার সাথে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন।রাজা দিব্যকের মৃত্যুর পর তাঁর ভাই রুদোকের পুত্র ভীম বরেন্দ্রীয় সিংহাসন আরোহন করেন। মাহিষ্য রাজা প্রায ২৫-৩০ বছর বরেন্দ্র শাসন করেছিলেন।এই জন্য মহাদেবপুর পত্নীতলা সহ বিস্তৃত এলাাকায় তাদের  দিব্যক,ওভীম রাজের অনেক স্সৃতি চিহ্ন রযেছে।
উত্তর বঙ্গে প্রথম প্রজা বিদ্রোহ যা কৈর্বত্য বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে প্রজা কর্তৃক প্রথম রাজা নির্বাচন করা হয়। মহীপালের পুত্র রামপাল  “অনন্ত সামন্তচক্রের” সহায়তায় ভীম বে যুদ্ধে নিহত করে পিতৃরাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। এই আখ্যায়িকা অবলম্বন করে রামপালের মন্ত্রী প্রজাপতি নন্দীর পুত্র সন্ধাকর নন্দী  “রামচরিতম’  নামে এক সংস্কৃত কাব্য রচনা করেন।
প্রাক -বিভাগ কালে বাংলার মাহিষ্য ( কৈবর্ত) সম্প্রদায় ১৯৪০ সালে মহাদেবপুর থানার বকাপুর গ্রামে ভীম সাগর তীরে দিব্যস্মৃতি বার্ষিকী উৎযাপন করেন। ভারতের  বিখ্যাত ঐতিহাসিক নাটোর মহকুমা নিবাসী স্যার যদুনাথ সরকার উক্ত উৎসবের সভাপতিত্ব করেন।মহদেবপুরের দানবীর জমিদার রায়বাহাদুর নারায়ন চন্দ্র  চৌধুরী ছিলেন এই সভার অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি।
১৯৪১ সালে পত্নীতলার দিব্যস্মৃতি যা অধুনা দীবর দীঘি র পারে  দিব্যস্মৃতির উৎসব হয়েছিল।এখানে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন খাঁন মোহাস্মদ আফজল।আর সভাপকি ছিলেন রায়বাহাদুর দীনেশ চন্দ্র সেন।
রামপালের সময় হতেই পাল রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে।এই সুযোগে মধ্যভারতের চেদিরাজ কর্ন এবং চেলি রাজ রাজেন্দ্র বাংলা আক্রমন করেন।ফলে  খ্রীঃ ১২ শতাব্দীতে বাংলায় সেন বংশের সুত্রপাত এবং পাল বংশের বিলুপ্তী ঘটে।