শ্বসন
১৭৮০ খৃষ্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়ার (Lavoisier) প্রথম শ্বসন (Respiration) কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন । জৈবিক প্রয়োজনে জীবদেহে প্রতিনিয়ত নানাপ্রকার জৈবনিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্তির প্রয়োজন হয় । আর এই শক্তি অর্জনের জন্য জীব খাদ্য গ্রহন করে । খাদ্যস্থিত স্থৈতিকশক্তি যা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৌরশক্তি থেকে সঞ্চিত হয়, তা শ্বসন নামক জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গতিশক্তি বা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় । এই গতিশক্তি বা তাপশক্তির দ্বারা জীব খাদ্যগ্রহন, বৃদ্ধি, চলন, রেচন, জনন, প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কার্য সম্পন্ন করে থাকে । জীব দেহে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপন্ন করাই স্বাসকার্যের তথা শ্বসনের একমাত্র উদ্দেশ্য ।
শ্বসনের সংজ্ঞা (Definition of Respiration)
যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ খাদ্যবস্তু (শ্বসন বস্তু) মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে উৎসেচকের সহায়তায় জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জল (কখনো ইথাইল অ্যালকোহল বা ল্যাকটিক অ্যাসিড) উৎপন্ন করে এবং খাদ্যে আবদ্ধ স্থৈতিক শক্তি গতি শক্তি বা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে মুক্ত হয় তাকে শ্বসন (Respiration) বলে ।
শ্বসনকে অপচিতিমূলক বিপাক (Respiration is a catabolic metabolism) প্রক্রিয়া বলে ।
শ্বসন প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যবস্তু (জৈব যৌগ) বিশ্লিষ্ট হয়ে সরল উপাদানে (অজৈব যৌগ) পরিণত হয় । এতে কোষের শুষ্ক ওজন হ্রাস পায় ও শক্তির মুক্তি ঘটে , তাই শ্বসনকে অপচিতিমূলক বিপাক (Catabolic Metabolism) বলে ।
শ্বসন অপচিতিমূলক বিপাক হলেও জীবের পক্ষে অপরিহার্য ।
জীবের বেঁচে থাকার জন্য শক্তির প্রয়োজন । শ্বসন প্রক্রিয়ার ফলেই খাদ্যস্থ শক্তির মুক্তি ঘটে যা জীবের বিভিন্ন জৈবনিক কাজে ব্যয়িত হয় । তাই শ্বসন অপচিতিমূলক বিপাক প্রক্রিয়া হলেও জীবের পক্ষে অপরিহার্য ।
শ্বসনকে তাপমোচী বিক্রিয়া বলে ।
শ্বসনে কোষস্থ খাদ্য (শ্বসন বস্তু) -এ আবদ্ধ স্থৈতিক শক্তির কিছু অংশ উচ্চ শক্তিধর জৈব যৌগ ATP -এর মধ্যে রাসায়নিক শক্তিরূপে সঞ্চিত হয় (প্রায় 40%) যা জীবদেহের জৈবিক ক্রিয়ায় সাহায্য করে । বাকি অংশ আলোকশক্তি, তাপশক্তি, বৈদুতিক শক্তিরূপে মুক্ত হয় । শ্বসনে উৎপন্ন শক্তির বেশ কিছু অংশ তাপ শক্তিরূপে মুক্ত হয় বলে শ্বসনকে তাপমোচী বিক্রিয়া বলে ।
‘শ্বসনে শক্তির মুক্তি ঘটে’
অথবা শ্বসনকে শক্তির মুক্তি বলে ।
শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোষস্থ খাদ্য জারিত হয়ে খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি তাপশক্তি রূপে মুক্ত হয়, তাই শ্বসনকে শক্তির প্রকাশ বা মুক্তি বলে ।
“শ্বসন প্রক্রিয়ায় শক্তির মুক্তি ও রুপান্তর ঘটে” ।
শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোষস্থ খাদ্য (শ্বসন বস্তু) জারিত হয়ে খাদ্যস্থ শক্তির মুক্তি ঘটায় । কোষস্থ খাদ্যে স্থৈতিক শক্তি আবদ্ধ থাকে । খাদ্য জারিত হবার ফলে খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি গতিশক্তি বা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে মুক্ত হয় । সুতরাং শ্বসনে স্থৈতিক শক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
দহন (Combustion)
যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোনো দাহ্য বস্তু উৎসেচক ছাড়াই কোষের বাইরে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে জারিত হয়ে তাপ ও আলো উৎপন্ন করে এবং শক্তির দ্রুত মুক্তি ঘটায় তাকে দহন বলে ।
শ্বসনকে নিয়ন্ত্রিত দহন বা মৃদু দহন বলে ।
দহনকালে জৈব বা অজৈব বস্তুর কার্বন পরমাণুর যোজকগুলি একই সঙ্গে ভেঙ্গে গিয়ে দ্রুত প্রচুর পরিমাণে তাপ ও আলোকশক্তি উৎপন্ন করে । কিন্তু শ্বসনকালে গ্লুকোজ অণুর কার্বন পরমাণুর যোজকগুলি ধাপে ধাপে ধীর গতিতে ভেঙ্গে তাপশক্তির মুক্তি ঘটায় । তাই শ্বসনকে নিয়ন্ত্রিত দহন বা মৃদু দহন বলে ।
দহন ও শ্বসনের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Respiration and Combustion)
শ্বসন | দহন |
1. শ্বসন কেবল সজীব কোষে ঘটে । | 1. দহন মৃত বা জড় দাহ্যবস্তুতে ঘটে । |
2. এটি একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া । | 2. এটি অজৈব রাসায়নিক ভৌত প্রক্রিয়া । |
3. এই প্রক্রিয়ায় শক্তির মুক্তি ধীরে ধীরে ঘটে । | 3. এই প্রক্রিয়ায় শক্তির মুক্তি তাড়াতাড়ি ঘটে । |
4. এই প্রক্রিয়ায় তাপ উৎপন্ন হলেও সাধারনত আলো উৎপন্ন হয় না | 4. এই প্রক্রিয়ায় অধিকতর তাপ ও আলো উৎপন্ন হয় |
5. এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি ATP অণুতে সাময়িক সঞ্চিত থাকে । | 5. এই প্রক্রিয়ায় শক্তি সঞ্চিত থাকে না । |
6. এই প্রক্রিয়ায় উৎসেচকের ভুমিকা আছে । | 6. এই প্রক্রিয়ায় উৎসেচকের কোনো ভুমিকা নেই । |
7. অক্সিজেন ছাড়াও শ্বসন সম্ভব । | 7. সাধারনত অক্সিজেন ছাড়া দহন সম্ভব নয় । |
শ্বসন প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজে সঞ্চিত শক্তির মুক্তি ঘটে
গ্লুকোজই প্রধান শ্বসনবস্তু । শ্বসন প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে । সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ অণুর মধ্যে সৌরশক্তি স্থিতিশক্তিরূপে সঞ্চিত থাকে । শ্বসন প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ জারিত (O2 দ্বারা বা O2 ছাড়াই) হওয়ায় গ্লুকোজ মধ্যস্থ শক্তি ধাপে ধাপে নির্গত হয় ।
শ্বসনবস্তু :-
শ্বসনকালে যে সকল কোষস্থ জৈব বস্তু জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে বা শক্তির মুক্তি ঘটায় তাদের শ্বসনবস্তু বলে । প্রধান শ্বসনবস্তু হল গ্লুকোজ ।
শ্বসনের স্থান (Site of Respiration) : শ্বসন (সবাত শ্বসন) প্রক্রিয়াটি দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয় । প্রথম পর্যায় গ্লাইকোলাইসিস কোষের সাইটোপ্লাজমে ও দ্বিতীয় পর্যায় ক্রেবস-চক্র মাইটোকনড্রিয়ায় ঘটে ।
শ্বসনের সময় : প্রতিটি সজীব কোষে দিবারাত্র শ্বসন সংঘটিত হয় ।
সবাত শ্বসন (Aerobic Respiration):-
যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বায়ুজীবি জীবের কোষস্থ শ্বসনবস্তু (গ্লুকোজ) সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তুস্থিত শক্তি সম্পূর্ণরূপে নির্গত হয় তাকে সবাত শ্বসন (Aerobic Respiration) বলে ।
C6H12O6+6O2⟶6CO2+6H2O+686K.CalC6H12O6+6O2⟶6CO2+6H2O+686K.Cal
অবাত শ্বসন (Anaerobic Respiration):-
যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অবায়ুজীবি জীবের কোষস্থ খাদ্য মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে কিন্তু অক্সিজেনযুক্ত যৌগের (অজৈব অক্সাইড) সাহায্যে আংশিকভাবে জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য যৌগ উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তুস্থিত শক্তির আংশিক নির্গমন ঘটায় তাকে অবাত শ্বসন (Anaerobic Respiration) বলে ।
C6H12O6+12NO3⟶6CO2+6H2O+12NO2+50K.CalC6H12O6+12NO3⟶6CO2+6H2O+12NO2+50K.Cal
সবাত ও অবাত শ্বসনের পার্থ্যক্য (Difference between Aerobic Respiration and Anaerobic Respiration)
সবাত শ্বসন | অবাত শ্বসন |
1. সবাত শ্বসন মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ঘটে । | 1. অবাত শ্বসন অক্সিজেনযুক্ত যৌগের অক্সিজেনের সাহায্যে ঘটে । |
2. বায়ুজীবি জীবে ঘটে । | 2. অবায়ুজীবি জীবে ঘটে । |
3. প্রান্তীয় হাইড্রোজেন গ্রাহক হল আণবিক অক্সিজেন । | 3. প্রান্তীয় হাইড্রোজেন গ্রাহক অক্সিজেনযুক্ত যৌগের অক্সিজেন । |
4. উপজাত বস্তু CO2 ও H2O । | 4. উপজাত বস্তু CO2, H2O এবং অন্যান্য বস্তু । |
5. সম্পূর্ণ শক্তি অর্থাৎ 686 Kcal শক্তি উৎপন্ন হয় । | 5. আংশিক শক্তি অর্থাৎ 50 Kcal শক্তি উৎপন্ন হয় । |
6. প্রান্তীয় শ্বসন দীর্ঘ্য | 6. প্রান্তীয় শ্বসন সংক্ষিপ্ত । |
সন্ধান (Fermentation)
যে অবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় শ্বসন বস্তু অক্সিজেন ছাড়াই অণুজীব নিঃসৃত উৎসেচকের সাহায্যে জারিত হয়ে বিভিন্ন জৈব যৌগ (ইথাইল অ্যালকোহল, ল্যাকটিক অ্যাসিড) উৎপন্ন করে ও শ্বসন বস্তু থেকে শক্তির আংশিক নির্গমন ঘটে তাকে সন্ধান (Fermentation) ঘটে ।
কোহল সন্ধানের (Alcoholic fermentation) দুটি ব্যবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো ।
অথবা শিল্পে সন্ধান প্রক্রিয়ার গুরুত্ব ।
(i) বাণিজ্যিকভাবে অ্যালকোহল তথা মদ তৈরিতে কোহল সন্ধানের ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে ।
(ii) বেকারি শিল্পে পাউরুটি, কেক, বিস্কুট তৈরিতে ।
কোহল সন্ধান ও অবাত শ্বসনের পার্থ্যক্য (Difference between Alcoholic fermentation and Anaerobic respiration)
অবাত শ্বসন | কোহল সন্ধান |
1. কেবল অবায়ুজীবি ব্যাকটেরিয়াতে ঘটে ।
|
1.উদ্ভিদ (বীজ), প্রাণীর পেশিকোষ ইস্টের দেহে, ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতিতে ঘটে । |
2. প্রান্তীয় হাইড্রোজেন গ্রাহক অক্সাইড । | 2. প্রান্তীয় হাইড্রোজেন গ্রাহক হল জৈব যৌগ । |
3. প্রান্তীয় শ্বসন থাকে । | 3. প্রান্তীয় শ্বসন থাকে না । |
4. এই প্রক্রিয়াতে মুক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন না হলেও অজৈব অক্সাইডের অক্সিজেন প্রয়োজন হয় । | 4. এই প্রক্রিয়াতে কোনো অক্সিজেন প্রয়োজনহয় না । |
5. উপজাত বস্তু CO2, H2O ও অন্যান্য পদার্থ (নাইট্রাইট, মিথেন ইত্যাদি) । | 5. উপজাত বস্তু ইথাইল অ্যালকোহল, CO2, ল্যাকটিক অ্যাসিড বা ভিন্ন বস্তু । |
দই পাতার সময়ে দুধে সামান্য দই মেশালে তাড়াতাড়ি দই পড়ে — কেন?
দুধকে দইতে পরিণত করে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক ব্যাকটেরিয়া । এই ব্যাকটেরিয়াগুলি দই -এর মধ্যে থাকে । দই তৈরি করবার সময় দুধে দই মেশালে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া খুব তাড়াতাড়ি দুধকে দইতে পরিণত করে ।
গ্লাইকোলাইসিস (Glycolysis):-
শ্বসনের যে সাধারণ পর্যায়ে কোষের সাইটোপ্লাজমে এক অণু গ্লুকোজ কয়েক রকম উৎসেচকের প্রভাবে আংশিকভাবে জারিত হয়ে দুই অণু পাইরুভিক অ্যাসিড (CH3COCOOH), 2 অণু ATP, 2 অণু NADH2 ও 2 অণু H2O উৎপন্ন করে তাকে গ্লাইকোলাইসিস বলে । গ্লাইকোলাইসিসের অপর নাম EMP পথ ।
গ্লাইকোলাইসিসকে EMP পথ বলে ।
গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার ধারাবাহিক বিক্রিয়াগুলি বিজ্ঞানী এম্বডেন, মেয়ারহফ ও পারনাস আবিষ্কার করেন বলে তাদের নামানুসারে গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়াকে EMP পথ বলে ।
অন্তঃশ্বসনের দুটি ধাপের নাম করো ।
অন্তঃশ্বসন বা কোশীয় শ্বসনের (সবাত শ্বসন) প্রথম ধাপটি হল গ্লাইকোলাইসিস যা কোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে । দ্বিতীয় ধাপটি হল ক্রেবস-চক্র যা কোষের মাইটোকনড্রিয়ায় ঘটে ।
গ্লাইকোলাইসিসের অন্তঃজাত পদার্থগুলির নাম ।
অথবা গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত অন্তিম বস্তুগুলির নাম ।
গ্লাইকোলাইসিসের অন্তঃজাত পদার্থগুলি হল 2 অণু পাইরুভিক অ্যাসিড (CH3COCOOH), 2 অণু ATP, 2 অণু NADH2 ও 2 অণু H2O ।
ক্রেবস চক্র (Krebs Cycle):-
সবাত শ্বসনের দ্বিতীয় পর্যায়ে পাইরুভিক অ্যাসিড থেকে উৎপন্ন অ্যাসিটাইল কো-এ মাইটোকনড্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করে যে চক্রাকার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার জৈব অ্যাসিড, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জল উৎপন্ন করে তাকে ক্রেবস-চক্র বলে ।
ক্রেবস-চক্রকে সাইট্রিক অ্যাসিড চক্র বলে ।
ক্রেবস-চক্রে উৎপন্ন প্রথম অ্যাসিডটি হল 6 কার্বনযুক্ত সাইট্রিক অ্যাসিড । সাইট্রিক অ্যাসিড দিয়ে ক্রেবস-চক্র শুরু হয় বলে ক্রেবস-চক্রকে সাইট্রিক অ্যাসিড চক্র বলে ।
ক্রেবস-চক্রকে TCA চক্র বলে ।
ক্রেবস-চক্রের প্রথম উৎপন্ন অ্যাসিডটি হল সাইট্রিক অ্যাসিড । সাইট্রিক অ্যাসিডে তিনটি কার্বক্সিলিক (-COOH) মূলক থাকায় ক্রেবস-চক্রকে TCA চক্র বা ট্রাই কার্বক্সিলিক অ্যাসিড চক্র বলে ।
গ্লাইকোলাইসিস ও ক্রেবস-চক্র পরস্পর সম্পর্কিত ।
সবাত শ্বসনের দুটি পর্যায় গ্লাইকোলাইসিস ও ক্রেবস-চক্র পরস্পর সম্পর্কিত । কোষের সাইটোপ্লাজমে গ্লাইকোলাইসিসের ফলে গ্লুকোজ থেকে পাইরুভিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় । এই পাইরুভিক অ্যাসিড থেকে CO2 অপসারিত হয়ে ও কো-এনজাইম A (CO – A) যুক্ত হয়ে অ্যাসিটাইল কো-এ উৎপন্ন করে । অ্যাসিটাইল কো-এ মাইটোকনড্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করে ক্রেবস-চক্র সূচনা করে । সুতরাং গ্লাইকোলাইসিস ও ক্রেবস-চক্র পরস্পর সম্পর্কিত ।
মাইটোকনড্রিয়ার অবস্থান এবং এর কাজ ।
মাইটোকনড্রিয়া সমস্ত আদর্শ কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত । মাইটোকনড্রিয়ার প্রধান কাজ হল সবাত শ্বসনের দ্বিতীয় পর্যায় ক্রেবস-চক্র সম্পন্ন করা ও ATP উৎপন্ন করা ।
মাইটোকনড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর বলে ।
মাইটোকনড্রিয়া মধ্যে সবাত শ্বসনের ক্রেবস-চক্র ও প্রান্তীয় শ্বসন ঘটে যার ফলে ATP উৎপন্ন হয় । এই ATP জীবের বিভিন্ন কাজে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয় । তাই মাইটোকনড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর বলে ।
শ্বাস অনুপাত বা RQ (Respiratory Quotient):-
শ্বসনকালে নির্গত CO2 গ্যাসের আয়তন ও গৃহিত O2 গ্যাসের আয়তনের অনুপাতকে শ্বাস অনুপাত বা RQ বলে ।
RQ = শ্বসনকালে নির্গত CO2 গ্যাসের আয়তন / শ্বসনকালে গৃহিত O2 গ্যাসের আয়তনের
সবাত ও অবাত শ্বসনে RQ -এর মান :-
সবাত শ্বসনে RQ -এর মান 1 ও অবাত শ্বসনে RQ -এর মান অসংজ্ঞাত ।
একটি সজীব কোষ থেকে সমস্ত মাইটোকনড্রিয়াগুলিকে অপসারণ করলে কোষটির কী হবে ?
মাইটোকনড্রিয়া না থাকলে কোষে শ্বসন ক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে না, ফলে শক্তি উৎপন্ন হবে না । শক্তি সরবরাহের অভাবে কোষের বিপাকীয় ক্রিয়াগুলি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে কোষটির মৃত্যু ঘটবে ।
বায়ুজীবী ও অবায়ুজীবী :-
বায়ুজীবী : যেসব জীব বায়ুমণ্ডলের মুক্ত অক্সিজেন (O2) গ্রহন করে শ্বসন ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের বায়ুজীবী বলে । এদের সবাত শ্বসন হয় ।
অবায়ুজীবী: যেসব জীব বায়ুমণ্ডলের মুক্ত অক্সিজেন (O2) ছাড়াই শ্বসন ক্রিয়া চালাতে পারে তাদের অবায়ুজীবী বলে । এদের অবাত শ্বসন হয় ।
উন্নত জীবে অবাত শ্বসন হয় না-
উন্নত জীবের জীবন ধারণের জন্য বেশি পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন । যেহেতু অবাত শ্বসনে অল্প পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়, তাই অবাত শ্বসনের দ্বারা তাদের এই চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় । তাই উন্নত জীবে অবাত শ্বসন হয় না ।
কোহল সন্ধান (Alcoholic fermentation) ও ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধানকারী (Lactic acid fermentation) জীবাণুর নাম:-
কোহল সন্ধান সন্ধানকারী জীবাণুর নাম হল ঈস্ট এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধানকারী জীবাণুর নাম হল ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক ব্যাকটেরিয়া ।
সন্ধানের (Fermentation) দুটি উদাহরণ ।
কোহল সন্ধান (Alcoholic fermentation) ও ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধান (Lactic acid fermentation)।
কয়েকটি সন্ধানকারী জীবের নাম :-
ঈস্ট (স্যাকারোমাইসিস সেরিভেসি) — কোহল সন্ধান ঘটায় ।
ল্যাকটোব্যাসিলাস ট্রাইকোডেস — ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধান ঘটায় ।
অ্যাসিটোব্যাকটর অ্যাসেটি— অ্যাসিটিক অ্যাসিড সন্ধান ঘটায় ।
শ্বাসকার্য (Breathing):-
যে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জীবদেহে সবাত শ্বসনের জন্য শ্বাসঅঙ্গের মাধ্যমে পরিবেশ থেকে বেশি অক্সিজেনযুক্ত বায়ু গ্রহন বা প্রশ্বাস এবং বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত বায়ুর বর্জন বা নিশ্বাস ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে শ্বাসকার্য (Breathing) বলে ।
শ্বসন ও শ্বাসকার্যের পার্থ্যক্য (Difference between Respiration and Breathing) :-
শ্বসন | শ্বাসকার্য |
1. এটি একটি জৈব রাসায়নিক জারণ প্রক্রিয়া । | 1. এটি একটি নিয়ন্ত্রিত যান্ত্রিক প্রক্রিয়া । |
2. সজীব কোষের ভিতরে ঘটে অর্থাৎ অন্তঃকোশীয় প্রক্রিয়া । | 2. শ্বাসঅঙ্গে ঘটে অর্থাৎ বহিঃকোশীয় প্রক্রিয়া । |
3. শক্তি বা ATP উৎপন্ন হয় । | 3. শক্তি বা ATP উৎপন্ন হয় না । |
4. সব জীবেই ঘটে । | 4. সব জীবে ঘটে না । |
5. গ্লাইকোলাইসিস, ক্রেবস চক্র ও প্রান্তীয় শ্বসন তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত । | 5. প্রশ্বাস ও নিশ্বাস দুটি পর্যায়ে বিভক্ত । |
প্রাণী ও উদ্ভিদের শ্বাসকার্যের মধ্যে পার্থক্য :-
(i) উন্নত প্রাণীদের নির্দিষ্ট শ্বাসযন্ত্র থাকে কিন্তু উদ্ভিদের নির্দিষ্ট শ্বাসযন্ত্র থাকে না ।
(ii) শ্বাসবায়ু পরিবহনের জন্য প্রাণীদের শ্বাসরঞ্জক থাকে কিন্তু উদ্ভিদের কোনো শ্বাসরঞ্জক থাকে না ।
প্রশ্বাস ও নিশ্বাস (Inspiration and Expiration):-
প্রশ্বাস (Inspiration) :- শ্বাসকার্যের যে পর্যায়ে শ্বাসঅঙ্গের মাধ্যমে অধিক অক্সিজেনযুক্ত বায়ু প্রাণীদেহে গৃহিত হয় তাকে প্রশ্বাস (Inspiration) বলে ।
নিশ্বাস (Expiration):- শ্বাসকার্যের যে পর্যায়ে প্রাণীদেহের শ্বাসঅঙ্গ থেকে অধিক কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত বায়ু পরিবেশে নির্গত হয় তাকে নিশ্বাস (Expiration) বলে ।
বহিঃশ্বসন ও অন্তঃশ্বসন (External and Internal Respiration) :-
যে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রাণীদেহে শ্বাসঅঙ্গ ও পরিবেশের বায়ুর মধ্যে গ্যাসীয় আদানপ্রদান ঘটে তাকে বহিঃশ্বসন (External Respiration) বলে । অপরপক্ষে যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোষ মধ্যস্থ খাদ্য জারিত হয়ে খাদ্যস্থ শক্তির মুক্তি ঘটায় তাকে অন্তঃশ্বসন (Internal Respiration) বলে ।
বহিঃশ্বসন ও অন্তঃশ্বসনের মধ্যে পার্থক্য (Difference between external and internal Respiration):-
বহিঃশ্বসন | অন্তঃশ্বসন |
1. বহিঃশ্বসনএকটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়া । | 1. অন্তঃশ্বসনএকটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া । |
2. এটি বহিঃকোশীয় প্রক্রিয়া । | 2. এটি অন্তঃকোশীয় প্রক্রিয়া । |
3. এই প্রক্রিয়ায় শ্বাসযন্ত্রের ভুমিকা আছে । | 3. প্রতিটি সজীব কোষ অংশ গ্রহন করে । |
4. এটিতে কোনো উৎসেচকের ভুমিকা নেই । | 4. উৎসেচকের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা গ্রহন করে । |
5. ATP উৎপন্ন হয় না, অন্য শক্তিও উৎপন্ন হয় না । | 5. ATP উৎপন্ন হয়, তাপশক্তি উৎপন্ন হয় । |
6. শ্বাসত্যাগ ও শ্বাসগ্রহন দুটি পর্যায় । | 6. গ্লাইকোলাইসিস, ক্রেবস চক্র ও প্রান্তীয় শ্বসন তিনটি পর্যায় । |
দিনের বেলায় সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসনের মধ্যে কী সম্পর্ক লক্ষ করা যায় ?
দিনের বেলায় সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসন একই সঙ্গে ঘটে । সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় যে গ্লুকোজ সংশ্লেষিত হয়, শ্বসন প্রক্রিয়ায় সেই গ্লুকোজ জারিত হয় । সালোকসংশ্লেষের ফলে উপজাত পদার্থ হিসেবে যে অক্সিজেন নির্গত হয়, তার কিছু অংশ শ্বসনের কাজে লাগে । আবার শ্বসনের ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইডের কিছুটা সালোকসংশ্লেষের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসন প্রক্রিয়ার কোনটি রাত্রিবেলায় সংঘটিত হয় না এবং কেন ?
সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াটি রাত্রিবেলায় সংঘটিত হয় না । কারণ :
(i) রাত্রে সূর্যালোক না থাকায় ক্লোরোফিল সক্রিয় হতে পারে না ।
(ii) জলের ফটোলাইসিস বা আয়নীকরণ ঘটতে পারে না ।
শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের উৎস :-
পরিবেশে অক্সিজেনের উৎস :
(i) সবুজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া দ্বারা উৎপন্ন অক্সিজেন ।
(ii) বায়ুমন্ডলে ওজোন (O3) গ্যাসের বিয়োজন ।
(iii) বিদ্যুৎ ক্ষরণের সময় বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্প থেকে উৎপন্ন অক্সিজেন ।
পত্ররন্ধ্র (Stomata):-
উদ্ভিদের সবুজ পাতায় ঊর্ধ্বত্বক ও নিম্নত্বকে প্রহরীকোষ বেষ্টিত যে ছিদ্রের মাধ্যমে প্রয়োজনাতিরিক্ত জল বাষ্পরূপে নির্গত হয় ও গ্যাসীয় পদার্থের বিনিময় বা আদানপ্রদান ঘটে তাকে পত্ররন্ধ্র (Stomata) বলে ।
লেন্টিসেল (Lenticel):-
গুল্ম ও বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদের কাণ্ডের ত্বকের বিদীর্ণ কিউটিকল বিহীন যে ছিদ্রের মাধ্যমে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে তাকে (Lenticel) লেন্টিসেল বলে ।
শ্বাসমূল বা নাসিকামূল বা নিউম্যাটোফোর (Pneumatophore) :-
সুন্দরী, গেঁও, গরাণ প্রভৃতি লবণাম্বু উদ্ভিদের কিছু শাখাপ্রশাখা মূল অভিকর্ষের বিপরীতে খাড়াভাবে মাটির ওপরে উঠে আসে এবং মূলে উপস্থিত ছিদ্রের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহন করে । এই মুলগুলিকে স্বাসমূল বলে ।
লবণাম্বু উদ্ভিদে শ্বাসমূল থাকে কারণ :-
লবণাম্বু উদ্ভিদরা কর্দমাক্ত লবণাক্ত মাটিতে জন্মায় । এই মাটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় উদ্ভিদের শ্বাসকার্যের অসুবিধা হয় । এই অসুবিধা দূর করার জন্য উদ্ভিদের মূলের শাখাপ্রশাখাগুলি মাটির উপরে উঠে আসে এবং মূলে উপস্থিত ছিদ্র দ্বারা বায়ুমন্ডল থেকে অক্সিজেন গ্রহন করে । তাই লবণাম্বু উদ্ভিদে শ্বাসমূল থাকে ।
শ্বাসঅঙ্গ (Respiratory Organ) :-
যে বিশেষ অঙ্গের দ্বারা প্রাণীদেহে শ্বাসকার্যের সময় পরিবেশ ও দেহরস বা রক্তের সাথে শ্বাসবায়ুর আদানপ্রদান বা গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে তাকে শ্বাসঅঙ্গ বা শ্বাসযন্ত্র (Respiratory Organ) বলে ।
শ্বাসঅঙ্গের (Respiratory Organ) বৈশিষ্ট্য:-
(i) শ্বাসঅঙ্গগুলি বিস্তৃত, আর্দ্র ও ব্যাপনে সক্ষম
(ii) শ্বাসঅঙ্গগুলি বেশি মাত্রার রক্তজালকপূর্ণ হওয়ায় রক্তসরবরাহ বেশি হয় ও গ্যাসীয় আদানপ্রদান ঘটে ,
(iii) শ্বাসঅঙ্গগুলির শ্বসন তলের ক্ষেত্রফল বেশি হয় ।
মধ্যচ্ছদা :-
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বক্ষগহ্বর ও উদরগহ্বরের মাঝখানে অবস্থিত অংশত পেশি ও অংশত টেনডন দ্বারা গঠিত যে ব্যবধায়ক পর্দা বক্ষগহ্বরের আয়তন কমিয়ে ও বাড়িয়ে শ্বাসকার্যে সাহায্য করে তাকে মধ্যচ্ছদা বলে ।
অ্যালভিওলাই (Alveoli):-
ফুসফুসের যে অসংখ্য সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম রক্তজালক পরিবেষ্টিত বায়ু প্রকোষ্ঠে গ্যাসীয় আদানপ্রদান ঘটে তাদের অ্যালভিওলাই (Alveoli) বলে । অ্যালভিওলাইকে ফুসফুসের একক বলে ।
শ্বাসরঞ্জক (Respiratory Pigment):-
যে সমস্ত প্রোটিনযুক্ত রঞ্জক পদার্থগুলি শিথিল রাসায়নিক যৌগরূপে শ্বাসবায়ু (O2 ও CO2) পরিবহন করে তাদের শ্বাসরঞ্জক (Respiratory Pigment) বলে । যেমন : হিমোগ্লোবিন (haemoglobin) ও হিমোসায়নিন ।
অতিরিক্ত বায়ুথলি বা এয়ার স্যাক (Air sac):-
পাখিদের ফুসফুসের সঙ্গে প্রায় রক্তজালকবিহীন কতকগুলি বায়ুপূর্ণ থলি থাকে যা শ্বাসকার্যের সময় ফুসফুসে অতিরিক্ত অক্সিজেন (O2) সরবরাহ করে । এদের অতিরিক্ত বায়ুথলি বা এয়ার স্যাক (Air sac) বলে । পায়রার অতিরিক্ত বায়ুথলি (Air sac) নয়টি ।
ভেজা ত্বক ও ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায় এমন দুটি প্রাণী:-
ভেজা ত্বকের (cuticle or skin) সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায় কেঁচো ও জোঁক । ফুলকার (gill)সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায় মাছ ।
অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র (Accessory respiratory organs) :-
কই, সিঙি, মাগুর প্রভৃতি জিওল মাছের ফুলকা ছাড়া যে বিশেষ শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে বায়ুর অক্সিজেন গ্রহন করতে পারে তাকে অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র (Accessory respiratory organs) বলে ।
বাজারে রুই ও কাতলা মাছ বেশির ভাগ মরা অবস্থায় পাওয়া যায় কিন্তু কই আর মাগুর মাছ বেশির ভাগ জীবন্ত থাকে — কারণ
রুই ও কাতলা মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র না থাকায় তারা বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন (O2) গ্রহন করে শ্বাসকার্য চালাতে পারে না, তাই তারা মারা যায় । কিন্তু কই ও মাগুর মাছে অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র থাকায় বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন (O2) গ্রহন করে সহজেই শ্বাসকার্য চালাতে পারেএবং অনেকক্ষণ জীবন্ত থাকে ।
পাখিদের ফুসফুসের সঙ্গে অতিরিক্ত বায়ুথলি বা এয়ার স্যাক (air sac) থাকে :-
আকাশে ক্রমাগত ওড়ার জন্য পাখিদের অধিক শক্তির দরকার । অধিক শক্তির জন্য প্রয়োজন অধিক অক্সিজেন । তাই বেশি অক্সিজেন ধারণের জন্য এদের ফুসফুসের সঙ্গে অতিরিক্ত বায়ুথলি বা এয়ার স্যাক যুক্ত থাকে।
কই, সিঙি, মাগুর মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র (Accessory respiratory organs) কিরূপ ?
কই মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র দেখতে গোলাপফুলের মতো । মাগুর মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র কদমফুলের মতো বা শাখাপ্রশাখাযুক্ত বৃক্ষের মতো । সিঙি মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র নলাকার ।
জিওল মাছ ডাঙ্গায় অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে পারে কারণ
জিওল মাছের (কই, সিঙি, মাগুর) অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র থাকায় তারা বায়ুর অক্সিজেন গ্রহন করে শ্বাসকার্য চালাতে পারে । বায়ুর অক্সিজেন গ্রহন করার উপযোগী শ্বাসঅঙ্গ থাকায় তারা ডাঙায় অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে ।
কুনোব্যাঙের শ্বাসঅঙ্গ (Respiratory Organ) :-
কুনোব্যাঙের শ্বাসঅঙ্গগুলি হল —ফুসফুস, মুখবিবর-গলবিলীয় মিউকাস পর্দা ও ত্বক । ডাঙায় ফুসফুসের দ্বারা, জলে মুখবিবর-গলবিলীয় মিউকাস পর্দা দ্বারা ও শীতঘুমের সময় ত্বকের দ্বারা শ্বাসকার্য চালায় ।
মানুষের দেহে কোন পথে বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবেশ করে তা তীর চিহ্নের সাহায্যে দেখানো হল ।
ফুসফুসে O2 এর প্রবেশ (প্রশ্বাস) ।
বায়ুমন্ডলের O2 → বহিঃনাসারন্ধ্র → নাসাপথ → অন্তঃনাসারন্ধ্র → নাসাগলবিল → গ্লটিস → স্বরযন্ত্র → ট্রাকিয়া → ক্রোমশাখা বা ব্রঙ্কাস → উপক্রোমশাখা বা ব্রঙ্কিওল → অ্যালভিওলাই
অধিক CO2 যুক্ত বায়ু কোন পথে ফুসফুস থেকে পরিবেশে নির্গত হয় তা তীর চিহ্নের সাহায্যে দেখানো হল ।
ফুসফুস থেকে CO2 নির্গমন (নিশ্বাস) ।
অ্যালভিওলাই → উপক্রোমশাখা বা ব্রঙ্কিওল → ক্রোমশাখা বা ব্রঙ্কাস → ট্রাকিয়া → স্বরযন্ত্র → গ্লটিস → নাসাগলবিল → অন্তঃনাসারন্ধ্র → নাসাপথ → বহিঃনাসারন্ধ্র → পরিবেশ
প্রশ্বাস বায়ু ও নিশ্বাস বায়ুতে অক্সিজেনের শতকরা পরিমাণ:-
প্রশ্বাস বায়ুতে অক্সিজেনের (O2) এর শতকরা পরিমাণ —20.94% আর নিশ্বাস বায়ুতে অক্সিজেনের (O2) এর শতকরা পরিমাণ —16.4%
প্রশ্বাস বায়ু ও নিশ্বাস বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের শতকরা পরিমাণ:-
প্রশ্বাস বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) এর শতকরা পরিমাণ —0.03% আর নিশ্বাস বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) এর শতকরা পরিমাণ —4.07%
শ্বসন হার :-
প্রতি মিনিটে যতবার শ্বাসক্রিয়া (একবার প্রশ্বাস ও একবার নিশ্বাস) সংঘটিত হয় তাকে শ্বসন হার বলে । স্বাভাবিক অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের শ্বাসহার 14 – 18 বার । পরিশ্রমকালে বা ব্যায়ামের ফলে শ্বসন হার বেড়ে যায় ।
প্রশ্বাস ও নিশ্বাসকার্যে সাহায্যকারী পেশিগুলির নাম:-
প্রশ্বাসকার্যে সাহায্যকারী পেশিগুলির নাম হল মধ্যচ্ছদা বা ইন্টারকস্টাল পেশি (বহিস্থ ও অন্তঃস্থ উভেয়ই) ।
নিশ্বাসকার্যে সাহায্যকারী পেশিগুলির নাম স্কেপুলার ইলিভেটর, স্কেলেনি ।
পেশির ক্লান্তি :- অথবা বেশি পরিশ্রম করলে পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে কারণ :-
মানুষের ঐচ্ছিক পেশিকোষে অতিরিক্ত পরিশ্রমকালে অক্সিজেনের অভাব ঘটায় অবাত শ্বসন হয় ও ল্যাকটিক অ্যাসিড পেশিকোষে জমতে থাকে । এর ফলে অম্লতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পেশিকোষের সংকুচিত হবার ক্ষমতা লোপ পায় । একে পেশির ক্লান্তি বলে ।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে পেশীকলা থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড দূরীভূত হয়, ফলে আবার পেশি সক্রিয় হয় ও পেশির ক্লান্তি দূর হয় ।
সন্ধান প্রক্রিয়ার ফলে দ্রবণটি গেঁজে ওঠে:-
কোহল সন্ধান প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ বা শর্করার দ্রবণ ঈস্ট নামক ছত্রাকের উপস্থিতিতে ইথাইল অ্যালকোহল ও CO2 উৎপন্ন করে । উৎপন্ন CO2 অসংখ্য বুদবুদের আকারে নির্গত হয় বলে দ্রবণটি গেঁজে ওঠে ।
প্লুরা এবং এর কাজ :-
মানুষের ফুসফুসের আবরণকে প্লুরা বলে । এর দুটি স্তর —ফুসফুস সংলগ্ন ভিতরের স্তরটি হল ভিসেরাল প্লুরা এবং বক্ষসংলগ্ন বাহিরের স্তরটি হল প্যারাইটাল প্লুরা ।
প্লুরা (i) ফুসফুসকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে (ii) শ্বাসকার্যের সময় বক্ষপিঞ্জরের ঘর্ষণজনিত আঘাত থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করে ।
শ্বসন ও পুষ্টির সম্পর্ক:-
শ্বসন ও পুষ্টি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি পদ্ধতি । করণ — জীবদেহে গৃহিত খাদ্য পরিপাক, শোষণ ও আত্তীকরণের মাধ্যমে প্রতিটি দেহকোষে গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ফ্যাট (শ্বসন বস্তু) সরবরাহ হয় । শ্বসনে এই খাদ্য উপাদান বা শ্বসন বস্তুর জারণ ঘটে শক্তি মুক্ত হয় । সুতরাং পুষ্টি পদ্ধতির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয় শ্বসন ।
দ্বিশ্বসন:-
পাখিদের ক্ষেত্রে একই বায়ুর দ্বারা প্রশ্বাসের সময় (ফুসফুসের বায়ু দ্বারা) একবার এবং নিশ্বাসের সময় (বায়ু থলির বায়ু দ্বারা) আর একবার মোট দুইবার ফুসফুসে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে বলে পাখিদের শ্বসনকে দ্বিশ্বসন বলে ।
শ্বসন সমস্ত জীবের পক্ষে অপরিহার্য :-
প্রত্যেক জীবদেহে নানাপ্রকার জীবজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় । এই জীবজ ক্রিয়াগুলি সম্পন্ন হওয়ার জন্য শক্তির প্রয়োজন । জীবদেহে শ্বসন ক্রিয়ার সময় খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি তাপশক্তিরূপে মুক্ত হয়ে জীবজ ক্রিয়াগুলি নিয়ন্ত্রণ করে । সুতরাং শক্তি উৎপাদনের জন্য সমস্ত জীবের পক্ষে শ্বসন অপরিহার্য ।
পরিশ্রম করলে শ্বাসকার্যের হার বৃদ্ধি পায় অথবা দৌড়লে হাঁফাই কেন ?
অধিক পরিশ্রম করলে বিপাক হার বেড়ে যাওয়ার জন্য শক্তির চাহিদা বেড়ে যায় । এই শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য কোষের মধ্যে বেশি পরিমাণ খাদ্যের জারণ ঘটে এবং এর জন্য দ্রুত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় । এই কারণে শ্বাসকার্যের হার বৃদ্ধি পায় । শ্বাসকার্যের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুত অতিরিক্ত অক্সিজেন নিতে হয় বলে আমরা হাঁফাই ।
CO2 — O2 বিনিময় বা আদানপ্রদানের সঙ্গে জড়িত উদ্ভিদ অঙ্গগুলির নাম:-
(i) পত্ররন্ধ্র (উদ্ভিদের পাতার ত্বক ও কচি কান্ডে অবস্থিত),
(ii) লেন্টিসেল (গুল্ম ও বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদের কাণ্ডের ত্বকে)
(iii) নিউম্যাটোফোর বা শ্বাসমূল (লবনাম্বু উদ্ভিদ) ।
শ্বাসনল কী এবং এটি কোথায় দেখা যায় ?
সিঙি মাছের ফুলকার পিছন দিক থেকে দেহকাণ্ডের দু’পাশে পৃষ্ঠপাখনা পর্যন্ত বিস্তৃত নলাকার অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রটি হল শ্বাসনল ।
সবুজ গাছ কীভাবে শ্বাসক্রিয়ায় সাহায্য করে ?
সবুজ গাছ সালোকসংশ্লেষের সময় পরিবেশ থেকে যত অণু CO2 গ্রহন করে ঠিক তত অণু O2 পরিবেশে নির্গত করে । পরিবেশে নির্গত এই অক্সিজেনের সাহায্যেই প্রাণীরা শ্বাসক্রিয়া চালায় । অর্থাৎ সবুজ গাছ সালোকসংশ্লেষে উপজাত রূপে যে অক্সিজেন (O2) নির্গত করে তা প্রাণীরা তথা সকল জীবের শ্বাসক্রিয়া চালাতে সাহায্য করে ।
নর্দমার জলে তেল ঢেলে দিলে মশার লার্ভাগুলি মরে যায় :-
মশার লার্ভা শ্বাস সাইফনের সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায় । নর্দমার জলে তেল ঢেলে দিলে তা একটি অপ্রবেশ্য স্তর সৃষ্টি করে ও অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে না বলে শ্বাসকার্য চালাতে পারে না । তাই লার্ভাগুলি মারে যায় ।
শ্বাসকার্য ও শ্বসনের সম্পর্ক :-
শ্বাসকার্য হল একটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়া যার দ্বারা পরিবেশের অধিক O2 যুক্ত বায়ু শ্বাসঅঙ্গে প্রবেশ করে ও অধিক CO2 যুক্ত বায়ু শ্বাসঅঙ্গের মাধ্যমে পরিবেশে নির্গত হয় । শ্বাসকার্যের মাধ্যমে গৃহিত O2 কোষে কোষে প্রবেশ করে খাদ্যবস্তুকে জারিত করে শক্তির মুক্তি ঘটায় ও CO2 উৎপন্ন করে । অর্থাৎ শ্বাসকার্যই দেহে O2 এর সরবরাহ বজায় রাখে ও দেহে উৎপন্ন CO2 কে নির্গত করতে সাহায্য করে । দেহে O2 সরবরাহ করে খাদ্যকে জারিত করা, শক্তির মুক্তি ঘটানো ও CO2 নির্গত করতে শ্বাসকার্য ও শ্বসন অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত ।