জীবন বিজ্ঞান

কোষের গঠন ও কাজ

Cell (সেল) বা কোষঃ কোষ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Cell (সেল)  এর অর্থ ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ।
❝জীবদেহের গঠন ও কার্যকরী একক হল কোষ।❞
অন্যভাবে বলা যায় যে,
❝বৈষম্যভেদ্য পর্দা দ্বারা আবৃত এবং জীবজ ক্রিয়া-কলাপ এর একক যা অন্য সজীব মাধ্যম ছাড়াই নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে তাকে কোষ বলে।

কোষের প্রকারভেদঃ
ক.অবস্থান ও  কার্য ভেদে কোষ দুই প্রকার যথা-

•দেহ কোষ বা সোমাটিক কোষ বা ডিপ্লয়েড কোষ।
•জনন কোষ বা রিপ্রোডাক্টিভ কোষ বা হ্যাপ্লয়েড কোষ।

খ.আবার নিউক্লিয়াস এর উপর ভিত্তি করে কোষ দুই প্রকার যথা –

•আদি কোষ বা প্রোক্যারিওটিক কোষ
•প্রকৃত কোষ বা ইউক্যারিওটিক কোষ

গ.জীবের উপর ভিত্তি করে প্রকৃত কোষ দুই প্রকার যথা-

•উদ্ভিদ কোষ
•প্রাণী কোষ

দেহ কোষঃ বহুকোষী জীবের যে সকল কোড শুধুমাত্র জীব দেহ গঠন করে তাদেরকে দেহ কোষ বলে এরা ডিপ্লয়েড (2n)  কোষ ।

জনন কোষঃ বহুকোষী জীবের যে সকল কোষ শুধুমাত্র জীবের জনন কাজে অংশ নেয় তাদেরকে জনন কোষ বলে এরা হ্যাপ্লয়েড (n)।

আদি কোষঃ জীবের যে সকল কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস নেই তাদেরকে আদিকোষ বলে। আদি কোষ দ্বারা গঠিত জীবকে আদিকোষী জীব বলে। ব্যাকটেরিয়া,সাইনোব্যাকটেরিয়া তে আদি কোষ পাওয়া যায়।

প্রকৃত কোষঃ জীবের যেসকল কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস আছে তাদেরকে প্রকৃত কোষ বলে ।প্রকৃত কোষ দ্বারা গঠিত জীবকে প্রকৃতকোষী জীব বলে ।উচ্চ শ্রেণীর উদ্ভিদ,শৈবাল,ছত্রাক ও প্রাণীকোষে প্রকৃত কোষ পাওয়া যায়।

Cell (সেল) বা কোষ বৈশিষ্ট্যঃ
*জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল গাঠনিক ও আণবিক  উপাদান কোষে থাকে।
*কোষ তার প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ভেতরে গ্রহণ করতে পারে।
*সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
*চারপাশে যে কোন উত্তেজনার প্রতি সাড়া দিতে পারে।
*অন্তঃস্থ ভারসাম্য রক্ষা করে।
*একটি Homeostatic অবস্থা বজায় রাখতে পারে ও প্রয়োজনে অভিযোজিত হতে পারে।
*নির্দিষ্ট সময় পর পর মৃত্যুবরণ করে।

কোষপ্রাচীর

কোষপ্রাচীর(Cell wall): জনন কোষ ছাড়া উদ্ভিদের অন্যান্য কোষের চারপাশে যে সচ্ছিদ্র,পুরু ও শক্ত আবরণ থাকে তাকে কোষপ্রাচীর বলে। রবার্ট হুক (১৬৬৫)সালে কোষপ্রাচীর আবিষ্কার করেন।

কোষ প্রাচীরের গঠনঃ•ভৌত গঠনঃ গঠন ও পরিস্ফুটন এর ভিত্তি তে কোষপ্রাচীরে তিনটি স্তর দেখা যায়। যথাঃ
ক.মধ্যপর্দাঃ কোষপ্রাচীরের যে স্তরটি দুটি পাশাপাশি কোষের মধ্যবর্তী স্থানে সাধারণ পর্দা হিসেবে থাকে তাকে মধ্যপর্দা বলে। এতে পেকটিন জাতীয় পদার্থ থাকে যা কোষপ্লেট সৃষ্টি করে।
খ.প্রাইমারি প্রাচীরঃ দ্বিতীয় স্তরটি হলো প্রাইমারি প্রাচীর।এটি সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ ও গ্লাইকোপ্রোটিন দ্বারা গঠিত। ১-৩μm পুরু স্তর।
গ.সেকেন্ডারি প্রাচীরঃ প্রাইমারি প্রাচীরের ওপর সেলুলোজ জমা হয়ে যে স্তর সৃষ্টি করে তাকে সেকেন্ডারি প্রাচীর বলা হয়। এটি ৫-১০μm পুরু স্তর ও তিনস্তর বিশিষ্ট। স্থায়ী কোষে এ প্রাচীর সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি অবস্থিত কোষগুলোর মাঝে সূতার মত প্লাজমোডেসমাটা সৃষ্টি হয়।


•রাসায়নিক গঠনঃকোষপ্রাচীরের প্রধান উপাদান সেলুলোজ। এছাড়া হেমিসেলুলোজ, পেকটিনস্,কিউটিন,সুবেরিন,লিগনিন ও মোম জাতীয় পদার্থ থাকে।

• সুক্ষ্ম গঠনঃকোষ প্রাচীরের ক্ষুদ্র গাঠনিক উপাদান হচ্ছে মাইসেলি। এতে প্রায় ১০০ টি সেলুলোজ অণু থাকে যা পরে মিলিত হয়ে ২৫০Å ব্যাস এর আঁটি গঠন করে একে ম্যাক্রোফাইব্রিল বলে। ম্যাক্রোফাইব্রিল হচ্ছে কোষপ্রাচীরের মূল একক।কোষপ্রাচীরের কাজঃ
*কোষপ্রাচীর কোষকে নির্দিষ্ট আকৃতি দান করে।
*কোষের দৃঢ়তা প্রদান করে যা উদ্ভিদ দেহে কঙ্কালের মত কাজ করে।
*কোষ গুলোকে পরষ্পর থেকে পৃথক রাখে।
*প্রতিকূল পরিবেশ থেকে সজীব প্রোটোপ্লাজমকে সার্বিকভাবে রক্ষা করে।
*কোষের বিভাজন ও বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।
*পাশাপাশি অবস্থিত কোষের পিট গুলো জল ও খনিজ লবণ যাতায়াতে সাহায্য করে।
*বহিঃ ও অন্তঃউদ্দীপনার পরিবাহক রূপে প্লাজমোডেসমাটা কাজ করে।

প্রোটোপ্লাস্ট

প্রোটোপ্লাস্টঃ কোষাভান্তরে অবস্থিত সজীব প্রোটোপ্লাজম ও নির্জীব বহুগুলোকে একত্রে প্রোটোপ্লাস্ট বলে। প্রোটোপ্লাজম (Protoplasm, গ্রিক, proto = প্রথম + plasma সংগঠন) : কোষের অভ্যন্তরে অবস্থিত অর্ধস্বচ্ছ, আঠালো এবং জেলির মতো অর্ধতরল, কলয়ডালধর্মী সজীব বস্তুকে প্রোটোপ্লাজম বলে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী কোষবিদ ফেলিক্স ডুজারডিন (Felix Dujardin) কোষের মধ্যে জেলির মত থকথকে পদার্থকে সারকোড (sarcode) নামে অভিহিত করেন। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে পার্কিনজে (Purkinic) এর নামকরণ করেন। জীবনের সঞ্চল বৈশিষ্ট্য (যেমন- শ্বসন, চলন, প্রজনন ইত্যাদি) প্রোটোপ্লাজমের মধ্যকার নানারূপ পরিবর্তনের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এ জন্যই বিজ্ঞানী হাক্সলী (Huxley) প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভৌত ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন।

প্রোটোপ্লাজমের ভৌত বৈশিষ্ট্য (Physical properties) :
* প্রোটোপ্লাজম বর্ণহীন অর্ধতরল, অর্ধস্বচ্ছ জেলির মতো থকথকে আঠালো ও কলয়ডীয় পদার্থ।
* ইলেকট্রণ অণুবীক্ষণযন্ত্রে প্রোটোপ্লাজমকে দানাদার মনে হয়।
* প্রোটোপ্লাজম জমাট বাঁধে।
* এর ঘনত্ব পরিবর্তনশীল ।
*  প্রোটোপ্লাজম তরল থেকে আঠালো এবং আঠালো থেকে তরল অবস্থায় অর্থাৎ “সল” অবস্থা থেকে “জেল” অবস্থায় এবং “জেল” অবস্থা থেকে “সল” অবস্থায় রূপান্তরিত হতে পারে।
* প্রোটোপ্লাজমের আপেক্ষিক গুরুত্ব জল অপেক্ষা বেশি।

প্রোটোপ্লাজমের রাসায়নিক গঠন (Chemical nature) : প্রোটোপ্লাজম বিভিন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। এসব পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে। প্রোটোপ্লাজমে পানির পরিমাণ সাধারণত শতকরা  ৯০ ভাগ। জৈব পদার্থের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন (৪৫%), কার্বোহাইড্রেট (২৫%), লিপিড (২৫%) ও অন্যান্য পদার্থ (৫%)। অজৈব লবণের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদির ক্লোরাইড সালফেট, কার্বোনেট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

প্রোটোপ্লাজমের জৈবিক বৈশিষ্ট্য (Biological properties) :

* প্রোটোপ্লাজম নানা ধরনের উত্তেজনায় সাতা দিতে সক্ষম। তাপ, আলো, স্পর্শ, বৈদ্যুতিক আঘাত ও বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাবে স্পষ্টভাবে সাড়া দেয় প্রোটোপ্লাজমে শ্বসন, খাদ্য গ্রহণ, পরিপাক, বৃদ্ধি, জনন প্রভৃতি জৈবনিক কার্যকলাপ সংঘটিত হয়।
*অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় প্রোটোপ্লাজম জল গ্রহণ ও ত্যাগ করতে পারে।
* এতে নানা ধরনের চলন দেখা যায়।
* প্রোটোপ্লাজমের মৃত্যু ঘটে অর্থাৎ এটি নশ্বর।

প্রোটোপ্লাজমের চলন ( Movement of protoplasm) : প্রোটোপ্লাজম সর্বদাই গতিশীল। প্রোটোপ্লাজমের এ গতিশীলতাই তার “চলন” নামে পরিচিত। কোষপ্রাচীরযুক্ত ও কোষপ্রাচীরবিহীন প্রোটোপ্লাজমের চলনে ভিন্নতা দেখা যায়। কোষপ্রাচীরযুক্ত প্রোটোপ্লাজমে জলস্রোতের মতো যে চলন দেখা যায় তাকে আবর্তন বা সাইক্লোসিস (cyclosis) বলে। আবর্তন আবার দু’ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ

ক. একমুখী আবর্তন : যে চলনে প্রোটোপ্লাজম একটি গহ্বরকে কেন্দ্র করে কোষপ্রাচীরের পাশ দিয়ে নির্দিষ্ট পথে একদিকে ঘুরতে থাকে তাকে একমুখী আবর্তন বলে। যেমন-পাতা ঝাঁঝির কোষস্ত প্রোটোপ্লাজমের চলন।

খ. বহুমুখী আবর্তন : যে চলনে প্রোটোপ্লাজম একটি গহ্বরকে কেন্দ্র করে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন দিকে ঘুরতে থাকে। তখন তাকে বহুমুখী আবর্তন বলে। যেমন- Tradeseantia – কোষস্থ প্রোটোপ্লাজমের চলন।

প্লাজমা মেমব্রেন

প্লাজমামেমব্রেনঃ কোষ প্রাচীরের নীচে সমস্ত প্রােটোপ্লাজমকে ঘিরে যে স্থিতিস্থাপক ও অর্ধভেদ্য সজীব পর্দা থাকে তাকে প্লাজমা মেমব্রেন, সেল মেমব্রেন, সাইটোমেমব্রেন বা কোষ ঝিল্লী বলে। মেমব্রেনটি জায়গায় জায়গায় ভাঁজ বিশিষ্ট হতে পারে। প্রতিটি ভাঁজকে মাইক্রোভিলাস (বহুবচনে মাইক্রোভিলাই) বলে।কার্ল নাগেলি ১৮৫৫ সালে এর নামকরণ করেন।

প্লাজমামেমব্রেন এর গঠনঃ
প্লাজমামেমব্রেন প্রধানত লিপিড ও প্রােটিন দিয়ে গঠিত। এর গঠন বিন্যাস সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন মডেল প্রস্তাব করেছেন তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের মতে লিপিড- এর অণুগুলাে দুটি স্তরে সজ্জিত হয়ে মেমব্রেন এর কাঠামাে গঠন করে এবং দুই স্তর লিপিড কাঠামাের মধ্যে প্রােটিন অণুগুলাে অবস্থান করে। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের দেয়া মডেল যেমন Danielli-Daveson এর স্যান্ডউইচ মডেল,জে ডি রবার্টসনের Unit-Membrane Model,এস.জে.সিঙ্গার-জি.এল.নিকলসন এর Fluid Mosaic Model বেশি গ্রহণ যোগ্য। ফ্লুইড মোজাইক মডেলকে আইসবার্গ মডেল ও বলা হয়।

প্লাজমা মেমব্রেনের বিভিন্ন অবস্থাঃ

•মাইক্রোভিলাইঃ কোন কোন প্রাণিকোষের মুক্ত প্রান্ত থেকে সূক্ষ্ণ আঙ্গুলের মতো যে অভিক্ষেপ (2nm দীর্ঘ) সৃষ্টি করে তার নাম মাইক্রোভিলাই। এগুলোর উপস্থিতিতে কোষের শোষণ ও ক্ষরণতল বৃদ্ধি পায়।

•ফ্যাগোসাইটিক ভেসিকলঃ অনেক সময় প্লাজমা মেমব্রেন প্রসারিত হয়ে কঠিনবস্তু বা খাদ্যকণাকে আবৃত করে ভেসিকল বা গহ্বর সৃষ্টি করে।

•ডেসমোজোমঃ প্লাজমা মেমব্রেনের কোন কোন স্থানে টনোফাইব্রিল (tonofibril) নামক অসংখ্য ফিলামেন্টযুক্ত বৃত্তাকার পুরু অঞ্চল বা ডেসমোজোম সৃষ্টি করে।

•পিনোসাইটিক ভেসিকলঃ প্লাজমা মেমব্রেনের কোথাও অতি ক্ষুদ্র খাঁজ সৃষ্টি হলে উক্ত খাঁজ দিয়ে পানি বা অন্য কোন তরল কোষের ভেতর প্রবেশ করে পিনোসাইটিক ভেসিকল সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত পর্দা বিলুপ্ত হলে তরল কোষের ভেতর মুক্ত হয়। এ প্রক্রিয়াকে পিনোসাইটোসিস (Pinocytosis) বলে।

প্লাজমা মেমব্রেন এর কাজঃ
*কোষকে নির্দিষ্ট আকার দান করে।
*কোষ এর অভ্যন্তরীণ সকল বস্তুকে ঘিরে রাখে।
*বাইরের সকল প্রতিকূল অবস্থা থেকে অভ্যন্তরীণ বস্তুকে রক্ষা করে।
*কোষের বাইরে এবং ভিতরে পদার্থের স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করে।
*বিভিন্ন বৃহদাণু সংশ্লেষ করতে পারে।
*বিভিন্ন রকম তথ্যের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

সাইটোপ্লাজম

সাইটোপ্লাজমঃকোষের প্রোটোপ্লাজমের নিউক্লিয়াসের বাইরে জেলির মতো অর্ধস্বচ্ছ তরল অংশকে সাইটোপ্লাজম বলে।১৮৬২ সালো রুডলফ ভন সর্বপ্রথম সাইটোপ্লাজম শব্দটি ব্যাবহার করেন।

সাইটোপ্লাজমের বৈশিষ্ট্যঃসাইটোপ্লাজম অর্ধতরল, দানাদার, অর্ধস্বচ্ছ, সমধর্মী, কলয়ডাল তরল পদার্থ, জৈব ও অজৈব পদার্থ, পানি, বিভিন্ন এনজাইম ও অ্যাসিড নিয়ে গঠিত। সাইটোপ্লাজমীয় মাতৃকার অপেক্ষাকৃত ঘন, কম দানাদার বহিঃস্থ শক্ত অঞ্চলকে এক্টোপ্লাজম এবং কেন্দ্রস্থ অপেক্ষাকৃত কম ঘন অঞ্চলকে এন্ডোপ্লাজম বলে।সাইটোপ্লাজম এর হালকা স্তরকে টনোপ্লাজম বলে। সাইটোপ্লাজম  এর আপেক্ষিক গুরুত্ব পানি অপেক্ষা বেশি।কোষের ভেতরের সমস্ত সজীব অংশ হলো প্রোটোপ্লাজম, অপরদিকে নিউক্লিয়াসের বাইরে অবস্থিত এবং কোষঝিল্লি দিয়ে পরিবেষ্টিত প্রোটোপ্লাজমের অংশই হলো সাইটোপ্লাজম।প্রোটোপ্লাজম কোষঝিল্লি, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস নিয়ে গঠিত। সাইটোপ্লাজম মূলত সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু ও মাতৃকা দিয়ে গঠিত। এতে নিউক্লিয়াস থাকে না।বংশগতির ধারক ও বাহক হলো প্রােটোপ্লাজম কিন্তু সাইটোপ্লাজমের সাথে বংশগতির কোন সম্পর্ক নেই।জীবনের আধার হিসেবে কাজ করে প্রোটোপ্লাজম, আর সাইটোপ্লাজম বিভিন্ন অঙ্গাণুর আধার হিসেবে কাজ করে।

সাইটোপ্লাজমের কাজঃ
*কোষের বিভিন্ন ধরনের অঙ্গাণু ও নির্জীব পদার্থগুলোকে ধারণ করা সাইটোপ্লাজমের প্রধান কাজ।
*বিপাকীয় কার্যাদি পরিচালনা করে এবং রেচন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করে।
*কোষের অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ করে।
*আবর্তনের (cyclosis) মাধ্যমে অঙ্গাণুগুলোকে নড়াচড়ায় সহায়তা করে।
*উত্তেজনায় সাঁড়া দিয়ে জীবের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।

সাইটোপ্লাজম এর বিপাকীয় ভূমিকাঃসাইটোপ্লাজমে অবস্থিত বিভিন্ন অঙ্গানু যেমনঃ রাইবোজোম,মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম,প্লাস্টিড,লাইসোজোম,গলগিবস্তু ইত্যাদি কোষীয় বিপাক ক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। শ্বসনের প্রথম ধাপ গ্লাইকোলাইসিস সাইটোপ্লাজমে সংঘটিত হয়।

রাইবোজোম

রাইবোজোমঃ জীবকোষের সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় বিরাজ করে বা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর গায়ে অবস্থিত যে দানাদার কনায় প্রোটিন সংশ্লেষণ করে তাকে রাইবোসোম বলে। জর্জ প্যালেড ১৯৫৫ সালে এটি আবিষ্কার করেন এবং ১৯৫৮ সালে রিচার্জ বি.রবার্টস একে Ribosome বা Ribonucleoprotein particle of microsomes নাম দেন।

রাইবোজোম এর গঠনঃএরা দ্বিস্তরী ঝিল্লী দ্বারা আবৃত।এদের ব্যাস ১৫০-২০০ Å।এরা হিস্টোন জাতীয় প্রোটিন এবং রাইবোনিউক্লিয়িক এসিড দ্বারা তৈরী।এতে প্রোটিন ও RNA ১:১ অণুপাতে থাকে। প্রতিটি রাইবোসোম অসম দুইটি উপএকক দিয়ে গঠিত।70S রাইবোসোমে 50S ও 30S এই দুইটি উপএকক থাকে এবং ৩টি RNA ও ৫২ প্রকারের প্রোটিন অণু থাকে। 80S রাইবোসোমে 60S ও 40S এই দুইটি উপএকক থাকে এবং ৪ টি RNA ও ৮০ প্রকারের প্রোটিন অণু থাকে।70S রাইবোসোম থাকে আদিকোষে আর 80S রাইবোসোম থাকে প্রকৃতকোষে।মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টে 70S রাইবোজোম থাকে।

রাইবোজোম এর কাজঃ
*রাইবোসোমের প্রধান কাজ হল প্রোটিন সংশ্লেষ করা।এজন্য একে জীবদেহের প্রোটিন ফ্যাক্টরী বলে
*স্নেহজাতীয় পদার্থের বিপাক সাধন করা।

 

গলজি বডি

গলজি বস্তুঃ নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি অবিস্থিত ও দ্বিস্তরী ঝিল্লি দ্বারা আবদ্ধ ছোট নালিকা, ফোস্কা বা ল্যামেলির মত সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গানুর নাম গলগি বডি বা বস্তু। মসৃন এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম হতে গলগি বস্তু সৃষ্টি হয়। ইতালীয় স্নায়ুতত্ত্ববিদ ক্যামিলো গলগি ১৮৯৮ সালে গলগি বডি আবিষ্কার করেন। তার নাম অনুসারেই গলগি বডির নামকরন করা হয়। একে কোষের প্যাকেজিং কেন্দ্র বলা হয়।

বিস্তৃতিঃপ্রোক্যারিওটিক কোষে এবং কিছু ছত্রাক, ব্রায়োফাইট,টেরিডোফাইটের শুক্রাণু,পরিণত সীভনল এবং প্রাণীর লোহিত রক্তকণিকায় গলজি বস্তু অনুপস্থিত। উদ্ভিদ কোষের সাইটোপ্লাজমে এরা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। প্রাণীকোষের নিউক্লিয়াস এর কাছাকাছি এরা অবস্থান করে।

কোষের ট্রাফিক পুলিশঃ
গলগি বডি কোষের কেন্দ্রেীয় অংশ থেকে ঝিল্লিবদ্ধ বস্তু বা ভেসিকল কোষের পরিধীর দিকে প্লাজমামেমব্রেন পর্যন্ত নিয়ে যায়। আবার গলগি বডি নিঃসৃত পদার্থের সংগ্রহ ও পরিবহনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। তাই গলগি বডিকে “কোষের ট্রাফিক পুলিশ” বলে।

কোষের কার্বোহাইড্রেট ফ্যাক্টরিঃ
গলগি বডিকে “কোষের কার্বোহাইড্রেট ফ্যাক্টরি” বলা হয়। কারন গলগি বডি কোষঝিল্লি নবায়ন ও কোষ প্রাচীর গঠনের মাধ্যমে কোষ বিভাজনে সাহায্য করে, গ্লাইকোপ্রোটিনের অলিগোস্যাকারাইডে পার্শ্ব শৃঙ্খল সংযুক্ত করে ও জটিল পলিস্যাকারাইড পদার্থের সংশ্লেষ ও নিঃসরন করে।


গলগি বডির গঠনঃ
গলজি বস্তু লিপোপ্রোটিন ঝিল্লি নির্মিত। এতে লেসিথিন ও ফসফোলিপিড থাকে। গলজিবস্তু এনজাইমে পরিপূর্ণ এছাড়া ফ্যাটি এসিড,ভিটামিন-c ও ক্যারোটিনয়েড থাকে। গলগি বডিতে তিন ধরনের গঠনগত উপাদান দেখা যায়। যথা-

• সিস্টারনিঃঅসমান দৈর্ঘ্যের লম্বা ও চ্যাপ্টা নালিকাসদৃশ (৩-৭টি) উপাদান গুলোকে সিস্টারনি বলে। এটি গলগি বডির সবচেয়ে স্থিতিশীল উপাদান।

•ভ্যাকুওলঃসিস্টারনির কাছে অবস্থিত গোলাকার থালার মত অংশ হলো ভ্যাকুওল। এটি এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের প্রাচীর প্রসারিত করনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।

•ভেসিকলঃসিস্টারনির নিচের দিকের ক্ষুদ্র থলির মতো বস্তুগুলোকে ভেসিকল বলা হয়।

গলগি বডির কাজঃ
*এটি এনজাইম ও হরমোন নিঃসরনে সহয়তা করে।
*লিপিড সংশ্লেষন ও প্রোটিন ক্ষরন করে।
*কোষঝিল্লি নবায়ন ও কোষ প্রাচীর গঠনের মাধ্যমে কোষ বিভাজনে সাহায্য করে।
*শুক্রানু গঠনে অ্যাক্রোজোম সৃষ্টি করে ও বিপাকীয় কাজে সহয়তা করে।
*মাইটোকন্ড্রিয়াকে ATP উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করে।
*লাইসোসোম তৈরি করে ও কোষস্থ পানি বের করে দেয়।
*বিভিন্ন পলিস্যাকারাইড সংশ্লেষন ও পরিবহনে অংশ নেয়।
*প্রোটিন ও ভিটামিন-সি সঞ্চয় করে।
*লাইসোজোম গঠন করে।

লাইসোজোম

লাইসোজোমঃ লাইসোজোম শব্দের অর্থ Lyso = হজমকারী, Somo = বস্তু। সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত কতগুলো হাইড্রোলাইটিক এনজাইম একটি পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। এদের লাইসোসোম বলে। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে দ্য দুবে (De Duve) এদের আবিষ্কার করেন। তিনি একে কোষের আত্মঘাতী থলে হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিছু ছত্রাক, শৈবালসহ অধিকাংশ প্রাণী কোষে লাইসোসোম পাওয়া যায়। তবে প্রাণীকোষের লোহিত কণিকা ও বেশির ভাগ উদ্ভিদ কোষে লাইসোজোম অনুপস্থিত।

সাধারণত দু’ধরনের লাইসোজোম পাওয়া যায়। যথা-
• ডাইজেসটিভ গহ্বর এবং
• রেসিডিউয়াল বস্তু ।

লাইসোজোমের গঠনঃ
প্রতিটি লাইসোসোম লিপোপ্রোটিন নির্মিত আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে। এর ভেতরে গাঢ়, দানাদার গহ্বরযুক্ত পদার্থ থাকে। এতে টিস্যু বিগলনকারী এনজাইম ছাড়াও প্রায় ৫০ ধরনের এনজাইম থাকে। একেকটি লাইসোসোম একেক ধরনের এনজাইমে সমৃদ্ধ।

আকার ও আয়তনঃ
লাইসোজোম সাধারণত আকার আকৃতিবিহীন তবে গোলাকার বা অসমানও হতে পারে। এদের আকার অনিয়মিত এবং পরিবর্তনশীল। এদের আয়তন সাধারণত ০.৪-০.৮ মাইক্রন।

উৎপত্তিঃ
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে লাইসোমের উৎপত্তি।

লাইসোসোমের কাজঃ
*পিনোসাইটোসিস ও ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় আক্রমণকারী জীবাণু ভক্ষণ ।
*তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দিলে কোষস্থ উপাদান ও অঙ্গাণুকে বিগলিত করে ধ্বংস করে যাকে অটোফ্যাগি (Autophagy) বলে।
*পর্যাপ্ত পরিমাণ এনজাইম থাকায় এরা প্রায় সব ধরনের জৈবিক বস্ত্র হজম করতে পারে।
*এরা জীবদেহের অকেজো কোষকে অটোলাইসিস (Autolysis) প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করে। ফলে সম্পূর্ণ কোষটিই পরিপাক হয়ে যেতে পারে।
*বিভিন্ন ধরনের বস্ত্তু নিঃসরণ করে।
*বিগলনকারী এনজাইমসমূহকে আবদ্ধ করে রেখে কোষের অন্যান্য ক্ষুদ্রাঙ্গকে রক্ষা করে।
*পরিপাক কাজে সাহায্য করে।
*কোষ বিভাজনে উদ্দীপনা যোগায়।

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামঃ কোষের সাইটোপ্লাজমে বিস্তৃত ও একক ঝিল্লিবেষ্টিত জালিকাকার অঙ্গাণু যা একাধারে প্লাজমামেমব্রেন ও নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করে এবং সাইটোপ্লাজমকে অনিয়ত প্রোকষ্ঠে বিভক্ত করে অবস্থান করে তাকে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলে।আলবার্ট ক্লড ও কেইথ পোর্টার ১৯৪৫ সালে মুরগীর ভ্রূণের সাইটোপ্লাজম থেকে এটি আবিষ্কার করেন।

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর বিস্তৃতিঃ 
সকল ইউক্যারিওটিক কোষেই এই জালিকা বিস্তৃত। যেসব কোষে প্রোটিন সংশ্লেষণ বেশি হয় সেখানে এদের বেশি পাওয়া যায়। যেমনঃ-অগ্নাশয়,যকৃত। তবে স্তন্যপায়ী প্রাণীর লোহিত কণিকা এবং শুক্রাণুতে এরা অনুপস্থিত।

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর গঠনঃ

ক.ভৌত গঠনঃ গঠনগতভাবে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Endoplasmic Reticulum) তিন প্রকার; যথা :

•সিস্টার্নি (Cisternae) : এরা দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা, শাখাবিহীন ও লম্বা চৌবাচ্চার মতো এবং সাইটোপ্লাজমে পরস্পর সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত থাকে।

•ভেসিকল (Vesicles) : এগুলো বর্তুলাকার ফোস্কার মতো।

• টিউবিউল (Tubules) : এগুলো নালিকার মতো, শাখান্বিত বা অশাখ। এদের গায়ে সাধারণত রাইবোসোম যুক্ত থাকে না।

খ.রাসায়নিক গঠনঃ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের (Endoplasmic Reticulum) প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো- প্রোটিন (৬০-৭০ ভাগ) ও লিপিড (৩০-৪০ ভাগ)। এতে প্রায় ১৫ ধরনের এনজাইম পাওয়া যায়; যেমন-গ্লুকোজ ৬-ফসফেটেজ, সক্রিয় ATPase, NADH ডায়াফোরেজ ইত্যাদি। অমসৃণ জালিতে RNA এবং গ্লাইঅক্সিসোম নামক ক্ষুদ্রাকার কণা থাকতে পারে।

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর কাজঃ

*এটি প্রোটোপ্লাজমের কাঠামো হিসেবে কাজ করে।
*অমসৃণ রেটিকুলামে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়।
মসৃণ রেটিকুলামে (বিশেষত প্রাণী কোষে) লিপিড, মতান্তরে বিভিন্ন হরমোন, গ্লাইকোজেন, ভিটামিন, স্টেরয়েড প্রভৃতি সংশ্লেষিত হয়।
*অনেকের মতে এতে কোষ প্রাচীরের জন্য সেলুলোজ তৈরি করে।
*এটি লিপিড ও প্রোটিনের অন্তঃবাহক হিসেবে কাজ করে।
*রাইবোসোম, গ্লাইঅক্সিসোমের ধারক হিসেবে কাজ করে।
*এরা কোষে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থকে নিষ্ক্রিয় করে।
*লিপিড ও প্রোটিনের অন্তঃবাহক হিসেবে কাজ করে।
*রাইবোসোমে উৎপন্ন প্রোটিন পরিবহনে এটি প্রধান ভূমিকা রাখে।

মাইটোকন্ড্রিয়া

ভৌত গঠন (Physical Structure) :

১. আবরণী : প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়ন লিপোপ্রোটিন বাইলেয়ারের দুটি মেমব্রেন নিয়ে গঠিত।

২. প্রকোষ্ঠ : দুই মেমব্রেনের মাঝখানের ফাঁকা স্থানকে বলা হয় বহিস্থ কক্ষ (প্রকোষ্ঠ) বা আন্তঃমেমব্রেন ফাঁক এবং ভেতরের মেমব্রেন দিয়ে আবদ্ধ কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে বলা হয় অভ্যন্তরীণ কক্ষ। অভ্যন্তরীণ কক্ষ জেলির ন্যায় ঘন সমসত্ত্ব , পদার্থ বা ধাত্র দ্বারা পূর্ণ থাকে। এই ধাত্র পদার্থকে ম্যাট্রিক্স বলে।

৩. ক্রিস্টি (Cristae) বা প্রবর্ধক : বাইরের মেমব্রেন সোজা কিন্তু ভেতরের মেমব্রেনটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে আঙ্গুলের মতো প্রবর্ধক সৃষ্টি করে। প্রবর্ধিত অংশকে ক্রিস্টি (cristae) বলে।

৪. অক্সিসোম (Oxisome): মাইটোকন্ড্রিয়ার (Mitochondria) অন্তঃআবরণীর অন্তর্গাত্রে অতি সূক্ষ্ম অসংখ্য দানা লেগে থাকে। এদের অক্সিসোম বলে।

৫. ATP-Synthases ও ETC : ক্রিস্টিতে স্থানে স্থানে ATP-Synthases নামক গোলাকার বস্তু আছে। এতে ATP সংশ্লেষিত হয়।

৬. বৃত্তাকার DNA ও রাইবোসোম : মাইটোকন্ড্রিয়ার (Mitochondria) নিজস্ব বৃত্তাকার DNA এবং রাইবোসোম (70 S) রয়েছে।

রাসায়নিক গঠন (Chemical Composition) : 
মাইটোকন্ড্রিয়ার (Mitochondria) শুষ্ক ওজনের প্রায় ৬৫% প্রোটিন, ২৯% গ্লিসারাইডসমূহ, ৪% লেসিথিন ও সেফালিন এবং ২% কোলেস্টেরল। লিপিডের মধ্যে ৯০% হচ্ছে ফসফোলিপিড, বাকি ১০% ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন E এবং কিছু অজৈব পদার্থ।

মাইটোকন্ড্রিয়ার ঝিল্লি লিপো-প্রোটিন সমৃদ্ধ। মাইটোকন্ড্রিয়াতে প্রায় ১০০ প্রকারের এনজাইম ও কো-এনজাইম রয়েছে। এছাড়া এতে ০.৫% RNA ও সামান্য DNA থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়ার অন্তঃঝিল্লিতে কার্ডিওলিপিন নামক বিশেষ ফসফোলিপিড থাকে।

মাইটোকন্ড্রিয়া (Mitochondria) র কাজ :

*কোষের যাবতীয় কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করা।
*শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম, কো-এনজাইম প্রভৃতি ধারণ করা।
*নিজস্ব DNA, RNA উৎপন্ন করা এবং বংশগতিতে ভূমিকা রাখা।
*প্রোটিন সংশ্লেষ ও স্নেহ বিপাকে সাহায্য করা।
*শ্বসনের বিভিন্ন পর্যায় যেমন- ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট, অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন সম্পন্ন করা।
*এরা Ca, K প্রভৃতি পদার্থের সক্রিয় পরিবহনে সক্ষম।
শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে অংশগ্রহণ করা।
*কোষের বিভিন্ন অংশে ক্যালসিয়াম আয়নের সঠিক ঘনত্ব রক্ষা করা।
*এতে বিভিন্ন ধরনের ক্যাটায়ন, যেমন-
Ca 2+,S 2+ ,Fe 2+ ,Mn 2+
ইত্যাদি সঞ্চিত রাখা।
*কোষের পূর্বনির্ধারিত মৃত্যু (apoptosis) প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।
*রক্ত কণিকা ও হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করা।

 

ক্লোরোপ্লাস্ট

প্লাস্টিডঃ উদ্ভিদ কোষস্থ সজীব বস্তু (প্রোটোপ্লাজম) এর ভিতর সাইটোপ্লাজমস্থ কোষীয় যে সর্ব বৃহৎ অঙ্গাণু বা ক্ষুদ্রাঙ্গটি স্ট্রোমা, গ্রানা কণা ও লিপো প্রোটিন ঝিল্লি দ্বারা আবদ্ধ থাকে তাকে প্লাস্টিড বলে। প্লাস্টিড হচ্ছে উদ্ভিদ কোষের একটি সবুজ ক্ষুদ্রাঙ্গের নাম। আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা ১৮৮৩ সালে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী শিম্পার সবুজ বর্ণের ধরণের কণা উদ্ভিদ কোষে দেখতে পান। এক কোষীয় কণা বা অঙ্গাণু ছিল প্লাস্টিড।

প্লাস্টিড এর গঠনঃ
প্লাস্টিড এর সংজ্ঞা থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে, প্লাস্টিড এ তিন ধরণের কোষীয় বস্তু থাকা আবশ্যক। এই তিনটি বস্তু হল, স্ট্রোমা, গ্রানা কণা ও লিপো-প্রোটিন ঝিল্লি।  স্ট্রোমা ও গ্রানা কণা সমূহ অভ্যন্তরীণ ঝিল্লী দ্বারা আবিষ্ট থাকে। স্ট্রোমা ও গ্রানা সম্মলিতভাবে থাইলাকয়েড মেমব্রেন তৈরি করে। থাইলাকয়েড মেমব্রেন সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে যা ক্লোরোপ্লাস্ট প্লাস্টিডে দেখা যায়। প্লাস্টিডের বাইরের ঝিল্লী হচ্ছের প্রোটিন দ্বারা নির্মিত। প্লাস্টিডের বাইরের ঝিল্লীর অতিরিক্ত অংশকে লিপো প্রোটিন ঝিল্লী। যত ধরণের প্লাস্টিড আছে সবধরনের প্লাস্টিডেই এই তিনটি বস্তু বিদ্যমান। এছাড়াও প্লাস্টিডে রাইবোসোম ও ডি এন এ থাকে।

প্লাস্টিড এর প্রকারভেদঃ

প্লাস্টিড সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ

•লিউকোপ্লাস্টঃ লিউকোপ্লাস্ট বর্ণহীন হয়ে থাকে, কারন এই ধরণের প্লাস্টিড ভূমির নিচে উদ্ভিদের মূলে বা ভূ-নিম্নস্থ কান্ডে অবস্থান করে।
লিউকোপ্লাস্ট তিন ধরনের হয়ে থাকে
ক.অ্যামাইলোপ্লাস্টঃ শর্করা জাতীয় খাদ্য সঞ্চয়  করে।
খ.অ্যালিউরোপ্লাস্টঃ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য সঞ্চয়  করে।
গ.এলাইওপ্লাস্টঃ তেল বা চর্বি জাতীয় খাদ্য সঞ্চয় করে।

•ক্রোমোপ্লাস্টঃ ক্রোমোপ্লাস্ট বর্ণযুক্ত হয়ে থাকে। এই ধরণের প্লাস্টিডকে রঙ্গিন প্লাস্টিডও বলা হয়ে থাকে। এক কথায় বলতে গেলে, উদ্ভিদের যেসব অঙ্গ রঙিন থাকে, সেই সব অঙ্গের প্লাস্টিডকে ক্রোমোপ্লাস্ট বলা হয়ে থাকে। ফুলের রঙিন পাপড়ি, মূলা,গাজর,মিষ্টি আলুর মূল/শিকরে ক্রোমোপ্লাস্ট থাকে।

•ক্লোরোপ্লাস্টঃ এই ধরনের প্লাস্টিড রঙিন, তবে তা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। যেকোন উদ্ভিদের সবুজ অংশকে ক্লোরোপ্লাস্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।উচ্চতর উদ্ভিদে লেন্স আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে।নিন্মশ্রেণীর উদ্ভিদে বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিড থাকে। প্লাস্টিডের মধ্যে ক্লোরোপ্লাস্ট এর গুরুত্ব অপরিসীম।

প্লাস্টিডের প্রধান কয়েকটি কাজঃ
*কোষে শ্বেতসার, চর্বি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার সংগ্রহ করতে সাহায্য করে।
*পাতা রঙিন ও ফুলকে সৌন্দর্য বর্ধিত করে থাকে।
*কোষে ফটোফসফোরাইলেশন ও ফটোরেসপিরেশনে অংশগ্রহণ করে।
*সূর্যের আলোর উপস্থিতে সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে।

ক্লোরোপ্লাস্টঃসালোকসংশ্লেষণে অংশগ্রহণকারী সবুজ রঞ্জকযুক্ত প্লাস্টিডকে ক্লোরোপ্লাস্ট বলা হয়। 1883 সালে বিজ্ঞানী Andreas Schimper ক্লোরোপ্লাস্ট আবিষ্কার করেন।সর্বপ্রথম স্টকিং ১৯৬০ সালে Spirogyra উদ্ভিদে DNA থাকার প্রমান পান।

ক্লোরোপ্লাস্ট এর গঠনঃ

•ক্লোরপ্লাস্টের আকৃতিঃ  বিভিন্ন উদ্ভিদে ক্লোরোপ্লাস্ট বিভিন্ন আকৃতির , যেমন – গোলাকার , ডিম্বাকার , জালকাকার , প্যাঁচানো ফিতার মতো ইত্যাদি হয়।

•আবরণীঃ ক্লোরোপ্লাস্ট দুটি পর্দা দিয়ে গঠিত । দুটি পর্দার মধ্যবর্তী স্থানকে পেরিপ্লাস্টিডিয়াল স্পেস বলে।

•স্ট্রোমাঃ ক্লোরোপ্লাস্টিডের ভিতরের স্বচ্ছ জেলির মতো তরলকে ধাত্র বা স্ট্রোমা বলে। স্ট্রোমার মধ্যে শ্বেতসার , প্রোটিন দানা , রাইবোজোম , DNA , RNA , উৎসেচক , তৈলবিন্দু , ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকে।স্ট্রোমার মধ্যে চাকতির মতো অসংখ্য অংশ স্তরে স্তরে সাজানো থাকে । পর্দাবৃত চাকতির স্তরগুলিকে একত্রে গ্রানা বলে।

•থাইলাকয়েডঃ প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্ট এ ৪০ থেকে ৬০ টি গ্রানা থাকে। গ্রানা গুলো পরস্পর সমান্তরালে সজ্জিত , একক পর্দাবৃত , একাধিক চ্যাপটা থলির মতো বস্তু বা থাইলাকয়েড দ্বারা গঠিত।প্রতিটি গ্রানাম ১০-১০০ টি থাইলাকয়েড নিয়ে গঠিত।এই থাইলাকয়েডের মধ্যে থাকে অসংখ্য কোয়ান্টাজোম দানা থাকে যা সালোকসংশ্লেষ এর একক রূপে পরিচিত।

•ATP- synthases: থাইলাকয়ড ঝিল্লি অসংখ্য গোল বস্তু ধারণ করে এদের ATP-synthases বলে। এতে ATP তৈরির সব এনজাইম থাকে।

•ফটোসিন্থেটিক ইউনিটঃ থাইলাকয়েড ঝিল্লিতে ফটোসিন্থেটিক ইউনিট থাকে। এতে ক্লোরোফিল-a,ক্লোরোফিল-b,ক্যারোটিন,জ্যান্থোফিলের ৩০০-৪০০ টি অণু অবস্থান করে।এছাড়া ফসফোলিপিড,কুইনোন ও বিভিন্ন এনজাইম থাকে।

ক্লোরোপ্লাস্ট এর কাজঃ
*ক্লোরোপ্লাস্ট সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শর্করাজাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে।
*ক্লোরোপ্লাস্টের কোয়ান্টোজোমে ফটোফসফোরাইলেশন প্রক্রিয়ায় ADP অণুকে ATP অণুতে রূপান্তরিত করে সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিরূপে আবদ্ধ করে।
*ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমা মধ্যস্থ উৎসেচক গুলো সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ সম্পাদনে ভূমিকা রাখে।
*বংশানুসারে নিজের স্বকীয়তা ধারণ করে রাখে।

সেন্ট্রিওল

সেন্ট্রিওলঃপ্রাণীকোষ ও কিছু উদ্ভিদকোষে যে অঙ্গাণু স্বপ্রজননক্ষম, নিউক্লিয়াসের কাছে অবস্থিত এবং একটি গহ্বরকে ঘিরে ৯টি গুচ্ছ প্রান্তীয় অণুনালিকা নির্মিত খাটো নলে গঠিত তাকে সেন্ট্রিওল বলে। বিজ্ঞানী ভেন বেনডেন (Van Benden) ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম সেন্ট্রিওল শনাক্ত করেন এবং ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে জার্মান জীববিজ্ঞানী থিওডোর বোভেরী (Theodor Bovery) এর বিশদ বিবরণ দেন।

সেন্ট্রিওলের অবস্থানঃশৈবাল, ছত্রাক, ব্রায়োফাইট, টেরিডোফাইট, জিমনোস্পার্ম অনেক ধরনের উদ্ভিদে এবং অধিকাংশ প্রাণীতে সেন্ট্রিওল পাওয়া যায়। প্রোক্যারিওটিক কোষ, ডায়াটম, ঈস্ট ও অ্যানজিওস্পার্মে এটি দেখা যায় না। সাধারণত নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি এটি অবস্থান করে। সংখ্যায় একজোড়া।

সেন্ট্রিওলের গঠনঃ
সেন্ট্রিওল নলাকার, প্রায় ০.২৫ মাইক্রোমিটার (μm)
ব্যাস সম্পন্ন ও ৩.৭ মাইক্রোমিটার  (μm) লম্বা। এরা দেখতে বেলনাকার, দুমুখ খোলা পিপার মতো। প্রত্যেক সেন্ট্রিওল প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা– প্রাচীর বা সিলিন্ডার ওয়াল, ত্রয়ী অণুনালিকা বা ট্রিপলেটস এবং যোজক বা লিংকার।সেন্ট্রিওল প্রাচীর ৯টি ত্রয়ী অণুনালিকা দিয়ে গঠিত। প্রত্যেক অণুনালিকা সমান দূরত্বে অবস্থিত এবং তিনটি করে উপনালিকা নিয়ে গঠিত। পরস্পর সংলগ্ন তিনটি উপনালিকাকে যথাক্রমে A, B, এবং C নামে চিহ্নিত করা হয়। উপনালিকাগুলো পার্শ্ববর্তী অণুনালিকার সঙ্গে এক ধরনের ঘন তন্তুর সাহায্যে যুক্ত থাকে। সেন্ট্রিওলের চারপাশে অবস্থিত গাঢ় তরলকে সেন্ট্রোস্ফিয়ার এবং সেন্ট্রোস্ফিয়ারসহ সেন্ট্রিওলকে সেন্ট্রোজোম বলে। সেন্ট্রিওল প্রধানত প্রোটিন, লিপিড ও ATP নিয়ে গঠিত।

সেন্ট্রিওলের কাজঃ
*সেন্ট্রিওলের প্রধান কাজ কোষ বিভাজনকালে মাকুতন্তু গঠন করা এবং ক্রোমোজমের প্রান্তীয় গমনে সাহায্য করা।
*সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলাযুক্ত কোষে সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলা সৃষ্টি করাও এর কাজ।
*শুক্রাণুর লেজ গঠন করতেও এটি সাহায্য করে।

নিউক্লিয়াস

নিউক্লিয়াসঃ

ইউক্যারিওটিক (প্রকৃত) কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত সবচেয়ে গাঢ়, অস্বচ্ছ, ঝিল্লীবেষ্টিত গোলাকার বা উপবৃত্তাকার অংশটি নিউক্লিয়াস (বা প্রাণকেন্দ্র) নামে পরিচিত । নিউক্লিয়াস কোষের অপরিহার্য অংশ। উচি * পরিণত সীভ কোষ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর লোহিত কণিকা ছাড়া সমস্ত প্রকৃত কোষে নিউক্লিয়াস থাকে। আবিষ্কার : ইংরেজ বিজ্ঞানী রবার্ট ব্রাউন (Robert Brown) ১৮৩১ সালে রাষ্ট্রার (একপ্রকার অর্কিড) পাতার কোষ পরীক্ষা করার সময় নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন।। ল্যাটিন শব্দ “Nux-nut” থেকে Nucleus নামের উৎপত্তি।

সংখ্যা ও আকারঃ সাধারণত প্রতিকোষে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। Vaucheria, Botrydium, Sphaeroplea প্রভৃতি শৈবাল এবং Penicillinula এই কতিপয় ছত্রাক কোষে বহুসংখ্যক নিউক্লিয়াস দেখা যায়। বহু “নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট এ ধরনের কোষকে সিনোসাইট ব (cocnocyte) বলা হয়। মেরুদণ্ডী প্রাণীর অস্থিকোষেও বহু নিউক্লিয়াস থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিউক্লিয়াস গোলাকার, কোন ক্ষেত্রে উপবৃত্তাকার, চাকুতি-সদৃশ অথবা শাখান্বিত নিউক্লিয়াসও দেখা যায়। শ্বেত রক্তকণিকার নিউক্লিয়াসের কোন নির্দিষ্ট আকার থাকে না। আদি কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না।

অবস্থান ও আয়তনঃ নিউক্লিয়াস সাধারণত কোষের মাঝখানে অবস্থান করে। কিন্তু কোষ গহ্বর বড় হলে নিউক্লিয়াস গহ্বরের একপাশে চলে আসে। কোষভেদে নিউক্লিয়াসের আয়তন ছোট বড় হতে পারে। সাধারণত একটি কোষে সামগ্রিক আয়তনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে থাকে তার নিউক্লিয়াস।

গঠনঃ নিউক্লিয়াসের রাসায়নিক উপাদান প্রধানত প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড। প্রোটিনগুলো হিস্টোন ও প্রোটামি জাতীয় প্রোটিন। নিউক্লিক এসিডগুলো ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড বা DNA ও সামান্য পরিমাণ রাইবোনিউক্লিক এসিড বা RNA এছাড়া কিছু সংখ্যক কো-এনজাইম, কো-ফ্যাক্টর, এসিটাইল-CoA ও বিভিন্ন ধরনের ফসফেট এবং কয়েক প্রকার খনিজলবণ সহযোগে নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। নিউক্লিয়াসের ভৌত গঠন পরীক্ষার প্রকৃষ্ট সময় হচ্ছে কোষ বিভাজনের পূর্ব মুহূর্ত । কোষ বিভাজনের পূর্ব মুহূর্তে ইন্টারফেজ ধাপে নিউক্লিয়াসে নিচে বর্ণিত চারটি প্রধান অংশ কোষ দেখা যায়।

ক.নিউক্লিয়ার মেমব্রেন (Nuclear membrane) : নিউক্লিয়াস সজীব দুটি ঝিরি দিয়ে আবৃত থাকে- বহিঃঝিল্লি ও অন্তঃঝিল্লি। ঝিল্লিদুটোকে একসাথে নিউক্লিয়ার মেমব্রেন বা নিউক্লিয়ার ঝিল্লী বলে। নিউক্লিয়াসের বহিঃঝিল্লিতে রাইবোজোম ও এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম সংলগ্ন থাকে। প্রতিটি মেমব্রেন দ্বিস্তরী ফসফোলিপিড বাইলেয়ার দিয়ে গঠিত। দুই ঝিল্লির মধ্যবর্তী, তরল পদার্থ পূর্ণ এবং ১০-১৫ nm চওড়া স্থানের নাম পেরিনিউক্লিয়ার স্পেস (perinuclear space)। এর অন্তঃস্তরটি ছিদ্রবিহীন কিন্তু বহিঃস্তরটি অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত। এসব ছিদ্রের নাম নিউক্লিয়ার রন্ধ্র। প্রতিটি রন্ধ্রের অভ্যন্তরে আটটি বৃত্তাকার ছোট ছোট কণা অবস্থিত। এসব কণার উপস্থিতির কারণে বুদ্ধগুে সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে। নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এর রাসায়নিক উপাদান বিশুদ্ধ প্রোটিন।

কাজঃ নিউক্লিয়াসের রক্ষণাবেক্ষণ করাই নিউক্লিয়ার ঝিল্লির প্রধান কাজ। তা ছাড়া এটি নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস ও ক্রোমোজোমকে সাইটোপ্লাজম থেকে পৃথক করে রাখে এবং সাইটোপ্লাজমের সাথে নিউক্লিয়াসের বিভিন্নকোষ ও এর গঠন ও বস্তুর যোগাযোগ রক্ষা করে। এটি এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের সাথে নিউক্লিয়াসকে সংযুক্ত রাখে এবং নিউক্লিয়ার বন্ধের মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তুর আগমন ও নির্গমন নিয়ন্ত্রিত হয়।

খ.নিউক্লিওপ্লাজম (Nucleoplasm) : নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরস্থ ও নিউক্লিয়ার মেমব্রেন নিয়ে আবৃত স্বচ্ছ, দানাদার ও জেলার মতো অর্ধতরল পদার্থটির নাম নিউক্লিওপ্লাজম বা ক্যারিওলিম (Karyolymph ) | নিউক্লিওপ্লাজম মূল প্রোনে দিয়ে তৈরি। এতে RNA, বিভিন্ন এনজাইম ও কিছু খনিজ লবণ থাকে। কাজ : নিউক্লিওলাস ও ক্রোমোজোমের ম্যাট্রিক্স বা ধারক হিসেবে কাজ করে এবং নিউক্লিয়াসের জৈবনিক কার্য নিয়ন্ত্রণ করে।

গ.নিউক্লিওলাস (Nucleplus) : নিউক্লিয়াস এর অভ্যন্তরে অবস্থিত ক্ষুদ্র, গোল, উজ্জ্বল ও অপেক্ষাকৃত মন দুইটি, নিউক্লিওলাস নামে পরিচিত। বিজ্ঞানী ফন্টানা (Fontana) ১৭৮১ সালে সর্বপ্রথম এটি দেখতে পান। প্রাণিবিদ বোম্যান (Bowman) ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে নিউক্লিওলাস-এর নামকরণ করেন। প্রত্যেক প্রকৃত কোষে সাধারণত একটি নিউরিলোস থাকা অপরিহার্য। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে ও প্রজাতিভেদে নিউক্লিওলাস-এর সংখ্যা দুই বা ততোধিক হতে পারে। অন্যদিকে শুক্রাণু, শ্বেতকণিকা প্রভৃতি কোষে যেখানে প্রোটিন সংশ্লেষণ হয় না সে সব কোষে নিউক্লিওলাস অনুপস্থিত। যে সব কোষ বেশি মাত্রায় প্রোটিন সংশ্লেষণ করে সে সব কোষে নিউক্লিওলাসের আকার বড় এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংখ্যা  একাধিক। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট স্থানে নিউক্লিওলাস সংযুক্ত থাকে। নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের এ কোষ বিভাজনের মেটাফেজ ধাপে নিউক্লিওলাস অদৃশ্য হয় এবং বিভাজনের শেষ ধাপে প্রতিটি অপত্য নিউক্লিয়াসে নিউক্লিওলাসের আবির্ভাব ঘটে। নিউক্লিওলাস বহিঃস্থ পার্স অ্যামরফা, মধ্যভাগে দানাদার নিউক্লিওলোনিমা এবং কেন্দ্রীয় তরল মাতৃকা এ তিনটি পৃথক অংশ নিয়ে গঠিত।
নিউক্লিওলাসের রাসায়নিক উপাদান হচ্ছে RNA, প্রোটিন ও DNA। এছাড়া কয়েক ধরনের এনজাইম, সামান্য লিপিড, ফসফরাস, সালফার, পটাশিয়াম প্রভৃতি খনিজ লবণও নিউক্লিওলাসে দেখা যায়। কাজ :নিউক্লিওলাস নিউক্লিক এসিড-এর ভান্ডার হিসেবে কাজ করে, রাইবোজোম সৃষ্টি করে এবং প্রোটিন ও RNA সংশ্লেষ করে।

ঘ.ক্রোমাটিন তন্তু (Chromatin fibre) বা নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম (Nuclear reticulum) : কোষের বিশ্রাম অবস্থায় (যখন কোষ বিভাজনে অংশ নেয় না) নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে জালিকার আকারে কিছু তন্তু দেখা যায়। এই জালিকাকে ক্রোমাটিন তন্তু বা নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম বলে। নিউক্লিয়াসের বিভাজনরত অবস্থায় বা পর্যায়-মধ্যক অবস্থায় যে অংশ বা বস্তু ফুলজিন রং গ্রহণ করে সেই বস্তুকে বলা হয় ক্রোমাটিন (গ্রিক, chroma = colour)। ক্রোমাটিন বস্তু DNA ও হিস্টোন ধরনের প্রোটিন নিয়ে গঠিত। DNA হিস্টোনের চারপাশ পেঁচিয়ে থাকে। ফলে যে মালার মতো আকৃতি গঠন করে তার নাম নিউক্লিওজোম (nucleosome) । ক্রোমোজোম আসলে পুঁতির আকারে সাজানো অনেকগুলো নিউক্লিওজোমযুক্ত ক্রোমাটিন DNA- সূত্র দিয়ে তৈরি। পাশাপাশি দুটি নিউক্লিওজোম যা দিয়ে যুক্ত থাকে তাকে লিংকার বলে।) নিউক্লিয়াসের বিভাজনের সময় পানি বিয়োজিত হওয়ায় ক্রোমাটিন আরও বেশি রঙিন, খাটো ও মোটা হয়ে ক্রোমোজোম ক্রোমোজোম DNA, RNA, প্রোটিন (হিস্টোন ও নন-হিস্টোন) দিয়ে গঠিত। এছাড়া এতে কিছু ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ধাতু রয়েছে। প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রতিটি নিউক্লিয়াসেই নির্দিষ্ট সংখ্যক (chromosome) সূত্রকে পরিণত হয়। রাসায়নিকভাবে প্রতিটি হিস্টোন-

কাজঃ কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোেজাম গঠন করা এবং বংশগতির রাসায়নিক পদার্থ DNA বহন করা ক্রোমোজোম থাকে।

নিউক্লিয়াস এর কাজঃ
*কোষের সকল জৈবনিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। একে কোষের প্রাণকেন্দ্র বলে আখ্যায়িত করা হয়।
*এটি মাইটোসিস ও মিয়োসিস বিভাজনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করে।
* জীবের বংশগতি নিয়ন্ত্রণ নিউক্লিয়াসের মাধ্যমেই ঘটে।

উদ্ভিদ ও প্রাণীর কাজ পরিচালনায় বিভিন্ন প্রকার কোষের ভূমিকা

কোষ জীবদেহের (উদ্ভিদ ও প্রাণী) গঠনের একক। এককোষী ও বহুকোষী প্রাণীদের কোষের কাজ ভিন্ন ভিন্নভাবে পরিচালিত হয়। পৃথিবীর আদি প্রাণের আবির্ভাবের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত এককোষী প্রাণী প্রোটোজোয়া পর্বের প্রজাতিগুলো তাদের দেহের সব ধরনের ক্রিয়াকলাপ- যেমন খাদ্যগ্রহণ, দেহের বৃদ্ধি ও প্রজনন ঐ একটি কোষের মাধ্যেমেই সম্পন্ন করে থাকে। বহুকোষী প্রাণীদের দেহকোষের মাঝে ভিন্নতা আছে, আছে বৈচিত্র্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *