চৌমাশিয়া জংলী পীরের দরগাঃ

গ্রাম বাংলার ছোট বড় ইতিহাসের নূরী খুঁজতে গিয়ে কত শত অজানা কাহিনী জানা হল,দেখা হলো, ইতিহাস এতো দিন পুর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া সমতল মাটিতে ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে।গত ৬ জুন বৃহস্পতিবার শহর থেকে সামান্য কয়েক মাইল দুরে বাবার বাড়ি।সেখানে একটু দরকারে গিয়েছিলাম উদ্দেশ্য লেখার রসদ সংগ্রহ করাও ছিল।বাড়ির কাছে জংলী পীরের দরগা আছে এ পর্যন্তই জানা।এর সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটি ঘটনা ঘটেছিল। এই গল্পটি ৮৭ বছর বয়সী আমার কাজিনের কাছে শুনলাম।গ্রামে থাকেন প্রকৃতির অপার কৃপায় চোখ দিয়ে সব দেখতে পান , স্পস্ট কথাবার্তা,জড়তা নেই। চৌমাশিয়া গ্রামের আলাবক্স মুন্সি আমার দাদাভাই। দাদা ভাইদের পরিবার বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার আদিনিবাস ছিল।উনারা তালুকদার ছিলেন,সেই সময় কোন কারন বসত ভাগ্য বিপর্যয়ে দাদাভাই তার ছোট ভাই কে নিয়ে নওগাঁ অঞ্চলে চলে আসেন।ছোট ভাই আবার তার মাতুলালয় নীলাম্বর রাজার বাড়ি রংপুর পীরগাছায় চলে যান।এই দুভাই পৈত্রিক সম্পদ না পেলেও পারিবারিক ভাবে সেই সময়ের শিক্ষা পেয়েছিলেন, আরবী, ফার্সী উর্দ্দু শিক্ষা সেগুলো ভাঙ্গিয়ে তাদের জীবনের চলার পথ কে সুগম করে।এছাড়া দাদা ভাই খুব ধার্মিক মানুষ ছিলেন।

তিনি বাগানে একটা শীলপাটায় বসে ধ্যান করতেন।সেই সময় তো এত শিক্ষা বা ডাক্তার ছিল না।সকল প্রকার রোগ ব্যাধি ঝাড় ফুকে সারতো। যেদিন ঘটনাটি ঘটেছিল সে দিন দাদাভাই দুরে কোন ধর্মীয় কাজে গিয়েছিলেন।দরগাতে একটি পুকুর ছিল পানি শুকিয়ে গেলেও প্রচুর মাছ ছিল। বড় জ্যাঠা বাড়িতে বসে আছেন, ছোট চাচা পুকুর পাড় দিয়ে বাড়ি আসার সময় পুকুরে মানুষদের মাছ মারতে দেখে জ্যাঠাকেও মাছ মারতে পাঠান। জ্যাঠা পলুই নিয়ে পুকুরে নামলে বড় একটা মৃগেল মাছ ধরে বাড়িতে নিয়ে আসেন। দাদীমা সেই মাছ বটিতে কুটতে গেলে মাছের ভিতর থেকে রক্ত বেরুতে থাকে।যত ধয় ততই রক্ত বেরয়। পরিবারের উপস্থিত সকলে ভয় পেয়ে যায়।এমন সময় দাদা ভাই বাড়ির সীমানায় পা রাখতেই তিনি অমঙ্গলের চিহ্ন দেখতে পান।

তিনি ঢুকেই জিঞ্জাসা করেন তোমরা কি করেছ, যখন মাছের এই রক্ত মাখা অবস্থা দেখে সমস্ত মাছ দাদাভাই পুকুরে ছেরে দিয়ে আসেন এবং দরগাতে উপর হয়ে মাফ চাইতে থাকেন,যেন পরিবারে কোন অমঙ্গল না হয়। সেদিন দাদাভাইয়ে মানে বাবার পরিবারের মানুষদের কোন ক্ষতি হয় নাই।কিন্ত এখানে হিন্দু, আদিবাসী, মুসলমানদের অন্য পাড়ার লোকদের অনেক ক্ষতি হয়।

এখন ও দরগা কে লোকেরা মান্য করে। কোন অপবিত্র কাজ পুকুরে করে না।কারো প্রয়োজনে হলে এখানে মানা মানতের সিন্নি রেধে বিলোয়। আগে জঙ্গলে ভরা ছিল এখন জঙ্গল কেটে পুকুর পাড়ে গৃহহীনদের সরকার ঘর করে করে দিয়েছে।সেদিন দরগা পাড়ে দেখতে গিয়েছিলাম। পুকুর পাড়ে বড় একটা বট গাছ এর ছায়ায় সিন্নি রান্না করা হয়।সেদিন আমার ভাইয়ের ছেলে সঙ্গে ছিল, সে বলছে ফুপু আমার ছেলের পায়ে একটা সমস্যা হয়েছিল। ওর মা এসে গাছের নীচে নামাজ পড়ে কিছু মানত করলে ছেলের পা ভাল হয়ে গেছে।

আগের দিনে গ্রাম বাংলায় এ ধরনে দরগা, ও মন্ডপের প্রচলন ছিল।সেই সময়ের বেশীর ভাগ মানুষই অজ্ঞ ছিল কিন্ত এখন কার মানুষদের মত এত হিংসাত্বক ছিলেন না। সাধারন মানুষেরা বাগানের গাছেদের মত গলাগলি করে মিশে থাকতো। কেউ একে অপরের দিকে নিশ্বাসের বিষাক্ত বিষ বাস্প ছুরে মারতো না।গ্রামের এই সমতল ভুমিতে না এলে আমার ও এই মানবতার চাষ দেখা হতো না।